করোনাকাল: ইলেকট্রনিক গেজেটে আসক্ত ৬৮ ভাগ স্কুল শিক্ষার্থী

বেড়েছে মাথা ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা ও মানসিক সমস্যা
ছবি: রয়টার্স

দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের  মধ্যে গত এক বছরে বেড়েছে মোবাইল ফোন ও গেজেট আসক্তি। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিড মহামারির পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মাথা ব্যথা, হাত পা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা এবং দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশক উইলির হেলথ সায়েন্স রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো উঠে আসে। গতকাল সোমবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫২ ভাগ শিক্ষার্থীই মনে করে তারা মানসিকভাবে বিষণ্ন এবং তাদের প্রায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কিংবা চট করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

দেশের ২১টি জেলায় ১ হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদ্রাসা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসটিসি ও সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী দিনে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা মোবাইলে সময় কাটাচ্ছে। ৯ ভাগ শিক্ষার্থী কম্পিউটার স্ক্রিনে ও ৮ ভাগ ট্যাবে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। 
গবেষণায় আরও দেখা যায়, ২০১৮-১৯ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে ডায়রিয়া, চুলকানির সমস্যা, পেট ব্যথা ও জ্বর সর্দি সবচেয়ে বেশি প্রকট ছিল। গত দেড় বছরে মাথা ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং জ্বর সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এর পেছনে ঘরবন্দি হয়ে থাকা ও গেজেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক পাওয়া গেছে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে।

দেশের ৭০ ভাগ শিশুই শারীরিক কোনো কাজ বা খেলাধুলার সুযোগ পায়নি ২০২০ সালে। তাদের ৫০ ভাগ ঘরের বাইরে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ একেবারেই পায়নি। মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী গেজেট ব্যবহার করেছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের জন্য। ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী কার্টুন, নাটক ও চলচ্চিত্র দেখার কাজে, ২৭ ভাগ শিক্ষার্থী সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য এবং ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী গেমস খেলার জন্য গেজেট ব্যবহার করেছে।

সবচেয়ে বেশি গেজেটের ব্যবহার দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। সবচেয়ে কম দেখা গেছে, মাদ্রাসা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে।

গবেষণায় মুখ্য তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম মাহবুবুর রশিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আকতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. আদনান মান্নান।

যোগাযোগ করা হলে ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, অতি অল্প বয়সে গেজেট নির্ভরশীলতা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা যদি দীর্ঘ মেয়াদি হয়, তবে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের একটি বড় অংশের জন্যই তা আশঙ্কার বিষয়।

তিনি এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. আদনান মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই গবেষণার ফলাফলকে সূত্র হিসেবে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক গবেষণা পরিচালিত করা দরকার। এতে করে শিক্ষার্থীরা এখন যে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে, তা কতদিন পর্যন্ত তাদের ভোগাচ্ছে, সেই সম্পর্কে জানা যাবে এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন জান্নাতুল মাওয়া, এমা বনিক, ইয়াসমিন আকতার, আমিনা জাহান, নাভিদ মাহবুব, মফিজুর রহমান শাহেদ এবং জোবায়ের ইবনে দ্বীন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চের শিক্ষক নাসরিন লিপি।

গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা করে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডিস সোসাইটি, দৃষ্টি চট্টগ্রাম এবং ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চট্টগ্রাম।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

3h ago