পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ, সিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে

হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ বন্ধ করে করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালুর পরিকল্পনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের
পাবনা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: স্টার

করোনা পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে পাবনায়। করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালে সিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী। এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারায় বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া করেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা বাড়াতে হাসপাতালটির অন্যান্য সব বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করে এটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালুর পরিকল্পনা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

আজ বুধবার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সিট না পেয়ে গুরুতর এক রোগীকে অক্সিজেনসহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: স্টার

আজ বুধবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত চার-পাঁচ জন রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। তারা বাড়িতে অক্সিজেন ভাড়া করে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন।

পাবনা সদর উপজেলার কিসমত প্রতাপপুর গ্রামের সোহরাব বিশ্বাস (৭০) শ্বাসকষ্ট ও করোনার অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু, হাসপাতালের করোনা বিভাগে কোন সিট খালি না থাকায় তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

কোন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী না পেয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সের সহকারীর কাছ থেকে অক্সিজেন সরবরাহ নেন তিনি।

পাবনা শহরের মায়া বেগমকেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যেতে হয়। মায়া বেগমের ভাইয়ের ছেলে শিহান সিলিন্ডার ভাড়া করে তাকে বাড়িতে নিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

কিছু দালাল সেখানে সিলিন্ডার ভাড়া দিচ্ছে উল্লেখ করে শিহান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দালালরা ঘণ্টায় এক হাজার টাকা সিলিন্ডার ভাড়া নেয়।

যোগাযোগ করা হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু আছে। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের করোনা বিভাগে প্রায় ১৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০০ জন এখনও চিকিৎসাধীন।’

তবে, সিট দিতে না পারলে করোনা বিভাগে কোন রোগী ভর্তি করা হয় না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘করোনা বা করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের অন্য রোগীদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া করোনা চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সরবরাহসহ অন্যান্য সুবিধা থাকা প্রয়োজন।’

তবে, করোনা হলেই সব রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হবে তা নয় জানিয়ে ডা. সালেহ বলেন, ‘আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই নিজেদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে অথবা ভাড়া করে নিজেদের ইচ্ছামতো অক্সিজেন নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন কোন ওষুধ নয় যে বাড়িতে থেকে ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা না জেনে অক্সিজেন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা চিকিৎসায় ১০০ শয্যার ইউনিট যথেষ্ট নয় বলে জানান ডা. সালেহ।

পাবনা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পাবনায় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া, গত এক সপ্তাহে এক হাজার ৩৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনিসার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে করোনা ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।’

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সব বিভাগ বন্ধ করে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ইতিমধ্যে মেডিসিন বিভাগ ছোট করে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও কয়েকটি বিভাগ বন্ধ করে শয্যা বাড়ানো হবে। অবস্থা এরকম চলতে থাকলে হাসপাতালের সব বিভাগ বন্ধ করে শুধুমাত্র ইমারজেন্সি চালু রেখে পুরো হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতে পারে।’

এজন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে, কেবল চিকিৎসা সেবা দিয়ে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মনিসার চৌধুরী।

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

9h ago