বঙ্গভ্যাক্স টিকার অ্যানিমেল ট্রায়াল চলছে, নভেম্বরে হিউম্যান ট্রায়ালের প্রত্যাশা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের অ্যানিমেল ট্রায়াল চলছে। গ্লোব বায়োটেক প্রত্যাশা করছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ট্রায়াল শেষ হবে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) অনুমোদন দিলে নভেম্বরের শুরুতে তারা মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করবে।
bongovax_1_4sep21.jpg
ছবি: গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সৌজন্যে

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের অ্যানিমেল ট্রায়াল চলছে। গ্লোব বায়োটেক প্রত্যাশা করছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ট্রায়াল শেষ হবে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) অনুমোদন দিলে নভেম্বরের শুরুতে তারা মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করবে।

আজ শনিবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে আমাদের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলবে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ট্রায়াল শেষ হলে অক্টোবরের শেষের দিকে আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) হস্তান্তর করবো। এরপর যদি তারা অনুমোদন দেয়, তাহলে নভেম্বরের শুরুতে আমরা মানবদেহে ট্রায়ালে যেতে পারবো।

bongovax_2_4sep21.jpg
ছবি: গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সৌজন্যে

মহিউদ্দিন বলেন, আমরা টিকাটির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি প্রটোকলসহ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে আবেদন করেছিলাম। বিএমআরসির সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রোটোকল পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের চিঠি দেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি আমরা তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সংশোধিত প্রোটোকল জমা দেই। পাঁচ মাস পরে গত ২২ জুন বিএমআরসি বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর অথবা শিম্পাঞ্জির ওপর টিকাটির ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে।

চিঠি পেয়ে আমরা অ্যানিমেল ট্রায়ালের প্রস্তুতি শুরু করি। ১ আগস্ট থেকে বানরের ওপর ট্রায়াল শুরু করেছি আমরা। প্রথমে আমরা বিদেশে অ্যানিমেল ট্রায়ালের চেষ্টা করেছিলাম। ভারত আমাদের জিটুজি পদ্ধতিতে আবেদন করতে বলেছিল। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছি কিন্তু আশানুরূপ ফল পাইনি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বলছে, এমআরএনএ টিকার বানরের ওপর পরীক্ষার দরকার নেই। অথচ বিএমআরসি বলছে, এই ট্রায়াল করতেই হবে। তাই বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসরণ করে বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে বানর সংগ্রহ করেছি আমরা— বলেন মহিউদ্দিন।

তবে কতগুলো বানরের ওপরে ট্রায়াল হবে সে বিষয়টি প্রকাশ করেননি মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমরা এখন প্রকাশ করছি না। ট্রায়াল শেষ হলে আমরা বিস্তারিত জানাবো। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরাই প্রথম বানরের ওপর ট্রায়াল করছি। নিঃসন্দেহে দেশের বিজ্ঞান গবেষণায় এটি একটি মাইলফলক। বানরের ওপর ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফলে টিকাটি নিরাপদ মনে করছি আমরা। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১১টি ভ্যারিয়েন্টে বিষয়ে জানা গেছে। এই ১১টি ভ্যারিয়েন্টের সিকোয়েন্স অ্যানালাইজ করে আমাদের ভ্যাকসিনের সিকোয়েন্স মিলিয়ে দেখেছি, প্রতিটি ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর।

তিনি আরও বলেন, আমেরিকার মডার্নার টিকা মডিফায়েড এমআরএনএ দিয়ে তৈরি। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকায় এমআরএনএ'র সঙ্গে ভাইরাসের তিনটি প্রোটিন যোগ করা হয়েছে। আমাদের টিকাটি প্রাকৃতিক এমআরএনএ দিয়ে তৈরি। তাই এটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও কার্যকর হবে বলে আশা করছি। মডার্না ইদুরের ওপর পরীক্ষা করেই মানবদেহে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা করেছে। তৃতীয় পর্যায়ে মানবদেহে ও বানরের ওপর একসঙ্গে পরীক্ষা করেছে। ফাইজার-বায়োএনটেক মানবদেহে ও প্রাণীদেহে একসঙ্গে পরীক্ষা করেছে। আমরা মডার্নার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানবদেহে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। যে কারণে ইদুরের ওপর পরীক্ষার পরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মানবদেহে ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল।

মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিএমআরসি আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। অথচ তাদের সহযোগিতা আমরা পাইনি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন চাওয়ার পরে পাঁচ মাস তারা সম্পূর্ণ নীরব থাকলো। বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত দিয়েছে। এরপর অর্ধশতাধিক পর্যবেক্ষণসহ আরও একটি চিঠি দিয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। যেখানে আমেরিকার মডার্না তাদের ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য মাত্র চার দিনে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছিল। তবে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, আশার বিষয় হলো— এক ডোজ টিকা অ্যানিমেল ট্রায়ালে কার্যকর এন্টিবডি পেয়েছি আমরা। আশা করছি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও একই রকম ফলাফল পাব। এটি +৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। সিনথেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় এটি ভাইরাস মুক্ত থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu agrees to Gaza ceasefire talks

The Israeli PM agrees to send delegations to Egypt and Qatar, where negotiators have been trying to secure the release of Israeli hostages as part of a possible Gaza ceasefire deal

42m ago