২০২০ এর মার্চে সাধারণ ছুটি দেশজুড়ে করোনা বিস্তারের প্রাথমিক কারণ: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের মার্চ মাসে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছিল। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ২৩ মার্চ ছুটির ঘোষণা আসার পর বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকা ছাড়ে। দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তারের প্রাথমিক কারণ ছিল এটাই।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আইসিডিডিআর,বিসহ ৭টি দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় এ কথা উঠে এসেছে। গবেষণাপত্রটি গত ৪ সেপ্টেম্বর নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের উদ্ভব, ভাইরাসটির দেশব্যাপী বিস্তারে লকডাউনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের চলাচলের ভূমিকা নিয়ে এতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আইসিডিডিআর,বি আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ, এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথ এর বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই গবেষণাটি শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস-এর সম্ভাব্য উদ্ভব হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এবং পরবর্তীতে আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে আরও ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ ২০২০ সালে। বিস্তার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার মার্চ মাসের ২৩ তারিখে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম থেকে সংগৃহীত ফেসবুক এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী এই অন্তর্বর্তীকালীন মার্চ ২৩ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে জনসাধারণের ঢাকা ত্যাগ করার প্রাপ্ত ডাটার সাথে সার্স-কোভ-২ জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, মার্চ ২৩ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে ঢাকা বহির্মুখী যাতায়াতই মূলত দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক কারণ।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, 'আমাদের এই কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে সহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাতে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা, পরিবহন এবং যানবাহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এবং যেসব দেশে উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট ছিল সেখান থেকে আগত ভ্রমণকারীদের সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা রাখা, সময়মতো লকডাউন সিদ্ধান্ত বা প্রয়োজনবোধে আন্তর্জাতিক চলাচল সীমাবদ্ধ করা। আমাদের এই কনসোর্টিয়াম গত বছরের মার্চ মাস থেকে একত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এই কাজ চলমান থাকবে এবং এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্য কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করতে পারব।'

আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণা নেতৃত্ব প্রদানকারীদের একজন ডক্টর ফেরদৌসী কাদরী বলেন, 'অনেক প্রতিকূলতা এবং লকডাউনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমার সহকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক কোলাবোরেটরদের সহযোগিতায় আমরা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমাদের দায়িত্ব এই গবেষণাতেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পর মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে এবং এর মধ্যে কিছু ভেরিয়েন্ট ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার। এই টিকাগুলোর কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদেরকে এধরনের কাজ অব্যাহত রেখে সরকারকে সময়মতো সঠিক তথ্য দিয়ে প্রযয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।'

বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় এই গবেষণায় ফেসবুক ডেটা ফর গুড, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড জনসংখ্যা মোবিলিটি তথ্য সরবরাহ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

8h ago