রেকর্ড আমদানির পরও চট্টগ্রামে ভোজ্য তেলের সংকট, বাড়ছে দাম

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রেকর্ড পরিমাণ ভোজ্য তেল আমদানি করা হলেও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিক ও ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রেকর্ড পরিমাণ ভোজ্য তেল আমদানি করা হলেও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিক ও ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

ভোক্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ‍প্রতি লিটার খোলা সোয়াবিন তেল কিনতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। পাম তেলও কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২১ টাকা খরচ করে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ লাখ ২২ হাজার টন তেল আমদানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে ভোজ্য তেলের। তেল শোধনাগারের মালিক, ডিলার ও ব্রোকাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে।

মার্চের শেষ দিকে সরকার বোতলহীন সয়াবিন তেলের পাইকারি মূল্য লিটারে ১৩৪ টাকা এবং খুচরা ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল পাইকারিতে পণ্যটির দর ছিল প্রতি লিটার ১৬৪ টাকা ও খুচরা ১৭৪ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় বোতলহীন সয়াবিন তেলের দাম অন্তত ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বোতলজাত তেলের দাম না বাড়লেও সংকট ছিল ৫ লিটার ও ৩ লিটারের বোতলের। ফলে বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনতে হয়েছে অনেককে।

যোগাযোগ করা হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এস এম নাজার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য দুর্বল বাজার মনিটরিং সিস্টেম দায়ী। ভোজ্য তেলের ওপর সরকারের শুল্ক মওকুফের সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে সরকার ১০ মার্চ তেল উৎপাদনের ওপর ১৫ শতাংশ এবং ৩০ জুন পর্যন্ত খুচরা পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে ছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ ডলার প্রতি টন। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০০ থেকে ১৯৫০ ডলারে।

পাইকারি বিক্রেতা নওশাদ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, খাতুনগঞ্জের কিছু দালাল ও ব্যবসায়ী মিল মালিকদের সহায়তায় ভোজ্য তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। ফলে আমরা তেল কিনতে বেশি খরচ করছি, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ডিরেক্টর তারিক আহমেদ ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের বেশি পণ্য মজুদ করার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে। তারা মূলত পরিবহন খরচ কমানোর জন্য এক ট্রাক তেল একসঙ্গে কিনে থাকেন। ফলে তারা ভয়ে একসঙ্গে তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।

তবে এ কথা অস্বীকার করেছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, অতিরিক্ত মজুদের জন্য জরিমানা করা হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, খোলা ও বোতলজাত—কোনো ধরনের তেলই চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

এনবিআর'র তথ্য মতে, প্রথম প্রান্তিকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ১৩৫ কোটি ১১ হাজার ডলার মূল্যের ৬ লাখ ৬০ হাজার টন পাম তেল এবং ৩ লাখ ৬২ হাজার টন সোয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

পাম তেল আমদানিতে টন প্রতি গড়ে ১ হাজার ৩২০ ডলার এবং সোয়াবিন ১ হাজার ৪০৫ ডলার খরচ হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে বাংলাদেশ ৮৯ কোটি ৯৪ হাজার ডলার মূল্যের ৬ লাখ ৪৭ হাজার টন পাম তেল এবং ২ লাখ ৯৮ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছিল।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, ভোজ্য তেলের এসও (সরবরাহ আদেশ) বিক্রির ধরন পরিবর্তন না করলে সীমিত জনবল দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তেল পরিশোধন মালিকরা সীমিত সংখ্যক ডিলারের কাছে এসও বিক্রি করে এবং তাদের কাছ থেকে কয়েক হাত বদল হয়ে ‍তা পাইকারি বাজারে আসে। ফলে মিল গেট থেকে পণ্য বাজারে আসার আগে কয়েক দফায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।

সফিকুজ্জামান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরাসারি এসও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা যায় কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুমন আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসনের একাধিক দল নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Trial of murder case drags on

Even 11 years after the Rana Plaza collapse in Savar, the trial of two cases filed over the incident did not reach any verdict, causing frustration among the victims.

9h ago