‘নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক হয়ে গেছে দুর্বল ও সবলের’

benozir_tanjim.jpg
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান (বাম থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ১১ অগাস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সী ও তদুর্ধ্ব কোনো মানুষ ভ্যাকসিন ছাড়া মুভমেন্ট করলে সেটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ইতোমধ্যে তিনি তার সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু আলোচনা বা বক্তব্যের তাৎপর্য কমেনি।

বর্তমানে দেশে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা নেওয়া মানুষ যেখানে তিন শতাংশেরও কম, সেখানে মন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আজ বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের 'জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করে' পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টিকা নেওয়া নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য না।

অথচ গতকাল সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতিতেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার অবস্থান জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও তার বক্তব্য প্রত্যাহারের কথা জানান।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সংকটকালে এমন আচরণ কতটা গ্রহণযোগ্য?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের সঙ্গে।

তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, এই ঘটনার ভেতর দিয়ে কোভিড নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভয়ঙ্কর রকমের বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি আবারও বেরিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, 'গতকাল আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে একটা লাইভ টক শোতে ছিলাম। তখনো আমি বলেছি যে, এটা যৌক্তিক না। আদৌ সম্ভব না। কারণ দেশে ১৮ বছরের ওপরের জনসংখ্যা ৭০ ভাগ। এই ১৫ কোটি বা তার বেশি সংখ্যক মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দিতে দুই বছর পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১১ তারিখ থেকে কীভাবে সম্ভব যে ১৮ বছরের ওপরে সবার টিকা দেওয়া থাকতে হবে?'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই পরিচালক আরও বলেন, 'মাসে যদি এক কোটি ডোজ করেও টিকা দেওয়া হয়, আর যদি অন্তত ১৫ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হয়, তাহলে তো ৩০ কোটি ডোজ টিকা লাগে। তাহলে তো ৩০ মাস এমনিতেই লাগে। ৩০ মাস মানে আড়াই বছর। অথচ ১১ তারিখ আসতে আর ছয় দিন বাকি। এটা কী করে সম্ভব?'

বে-নজির আহমেদের পর্যবেক্ষণ হলো, 'তারা যা বলতে চেয়েছেন, তা হয়তো বোঝাতে পারেনি। স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো টিকা দ্রুত দিতে হবে। যত দ্রুত পাওয়া যায়, যত বেশি কাভারেজ পাওয়া যায়, ততই বাংলাদেশের জন্য ভালো।'

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, 'এই ঘটনার ভেতর দিয়ে কোভিড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর রকমের সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আমরা আবারও দেখতে পাচ্ছি। কে কী বলছে, কার সঙ্গে কী সম্পর্ক কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।'

গতকাল টিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে তানজিম উদ্দিন খান আরও বলেন, 'এখন যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন তাদের কাছে যুক্তি-বুদ্ধির চাইতে শক্তির ব্যবহারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক যে শৃঙ্খলা থাকার কথা ছিল, সেটা আসলে নেই। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের স্বার্থকেন্দ্রিক শক্তির কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ওটা তাদের আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে।'

এই অধ্যাপকের বক্তব্য, 'একটি রাষ্ট্র শাসন কীভাবে করতে হয়, তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা কী, আইনগত ব্যবস্থা কী, সংবিধান কী— সেটা সম্পর্কে যদি স্বচ্ছ ধারণা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এ ধরনের বক্তব্য আসতো না।'

এই ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সব সময় শক্তি প্রয়োগের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মন্তব্য করে তানজিম উদ্দিন খান বলেন, 'নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক হয়ে গেছে দুর্বল ও সবলের সম্পর্ক। যার ফলে সব সময় আমাদের রাজনৈতিক নেতারা শক্তির ওপরে নির্ভর করছেন। রাষ্ট্রের সার্বিক কার্যক্রম, স্বাভাবিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা সেটার ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এটা হচ্ছে তারই প্রকাশ।'

তার অভিমত, 'মানুষ যে জবাবদিহিটা চায় সেটাকে চেপে রাখা, বন্ধ করে রাখার জন্য এমন আচরণ। এটা এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকিও।'

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

15h ago