সদস্যপদ পাওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট

আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ পাওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আইভিআই’র সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংস্থাটি ১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাগত জানায়।
এ ছাড়া, আইভিআই’র মৌখিক কলেরা ভ্যাকসিনের অভ্যন্তরীণ বিকাশ ও বিতরণসহ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অংশীদারদের সঙ্গে ভ্যাকসিন গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনকেও এই অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয়।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে অলাভজনক আন্ত-সরকারি সংস্থা আইভিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ৩৬টি দেশ রয়েছে যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, ভারত ও ফিনল্যান্ড রাষ্ট্রীয় অর্থদাতা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মধ্যস্থতাকারী।
বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চলতি বছরের ২১ মার্চ চুক্তিটি অনুসমর্থন করে এবং গত ৫ এপ্রিল জাতিসংঘ চুক্তির অনুসমর্থন প্রাপ্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিটি গত ১ মে থেকে কার্যকর হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইভিআই’র সদর দপ্তরে সদস্য পদের নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। সেসময় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশ ও আইভিআই’র মধ্যকার সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বিশেষত কলেরা, শিগেলা, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম তুলে ধরেন।
তিনি প্রত্যাশা করেন, এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বৈশ্বিক বাজারের জন্য স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশেই ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হবে।
ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন, ভ্যাকসিন প্রযুক্তি হস্তান্তর, বাংলাদেশের গবেষক ও চিকিৎসকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আইভিআইকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি প্রত্যাশা করেন, সদস্য দেশ হিসেবে নতুন ভূমিকা আগামীতে বাংলাদেশ ও আইভিআই’র মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আইভিআই’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জর্জ বাইকারস্টাফ আইভিআই প্রতিষ্ঠা-চুক্তির প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ প্রাপ্তিতে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, আইভিআইয়ে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করবে।
আইভিআই’র মহাপরিচালক ড. জেরোম কিম বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, বিকাশ ও বিতরণে আইভিআই’র কার্যক্রম ও চলমান প্রকল্প এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আইভিআই’র সম্পর্ককে তুলে ধরে একটি বিশদ ও তথ্যমূলক উপস্থাপনা প্রদান করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যুরোর মহাপরিচালক চাংগ উক জিন তার বক্তব্যে সংক্রামক ব্যাধিমুক্ত বিশ্ব গঠন-বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইভিআই’র সদস্য দেশ হিসেবে যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে স্বাগত জানান।
তিনি দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে ইতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে আইভিআই’র বিকাশে কোরিয়ার সরকারের দৃঢ় সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি প্রত্যাশা করেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ যৌথভাবে আইভিআই’র গঠনমূলক কার্যক্রমকে ভবিষ্যতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং বিশ্বব্যাপী সুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ কলেরা ভ্যাকসিনসহ নানা ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে আইভিআই, আইসিডিডিআর,বি ও বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদকদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন।
তিনি আশা করেন, এমন সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে এবং ভাইরাসজনিত মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, আইভিআই’র সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ রোগমুক্ত বিশ্ব নিশ্চিতকরণে আইভিআই’র কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নততর গবেষণা, ক্লিনিক্যাল বিকাশ ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম করবে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, আইভিআই ও আইসিডিডিআর,বি’র সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে কলেরাসহ অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে ইনসেপ্টার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি আশা করেন, আইভিআই, বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও আইসিডিডিআর,বি’র মধ্যে যৌথ সহযোগিতার সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হলে তা আগামীতে নানা ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রীপ্রিয়া রাঙ্গনাথান তার বক্তব্যে ভারত ও আইভিআই’র মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
আইভিআই’র সদস্যপদ পাওয়ায় তিনি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সহযোগিতার অগ্রগতি সাধনে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের সরকারের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সুইডেনের চার্জ দ্য’অ্যাফেয়ার্স গ্যাব্রিয়েলা অগাস্টসন ও ফিনল্যান্ড দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান মিকা রতসালাইনেন সংক্রামক রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের সহযোগিতামূলক কাজের কথা তুলে ধরেন।
তারা আইভিআইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান ও সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
Comments