রাজবাড়ী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

ডাক্তার নেই সাড়ে ৫ মাস, নার্স-আয়ারাই করছেন চেকআপ-ডেলিভারি

রাজবাড়ী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা মায়েরাই বেশি আসেন রাজবাড়ীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে। অথচ সেটিই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

যাদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উন্নত সেবা নিতে পারলেও গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষ রয়েছেন বিপাকে। গত মার্চ থেকে রাজবাড়ীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নেই গাইনি চিকিৎসক, বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। নার্স ও আয়া দিয়েই চলছে চেকআপ ও নরমাল ডেলিভারি। এর ফলে গুরুতর রোগীরা এই কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এই কেন্দ্রে এখন রয়েছেন কেবলমাত্র একজন অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকায় এই কেন্দ্রটি অবস্থিত। গত ৮ মার্চ থেকে এখানে নেই গাইনি চিকিৎসক। শূন্য রয়েছে অফিস সহকারীর পদও। দুটি নার্স ও দুই ভিজিটরের পদ থাকলেও কাজ করছেন একজন করে। পরিচ্ছন্ন কর্মীর সবগুলো পদ শূন্য।

দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রটির অপারেশন থিয়েটার। ১৯৯৪ সালে পাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটির অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়ায় সেটা নিয়ে ঢাকা যাওয়া সম্ভব হয় না জরুরি অবস্থায়।

গত রোববার রাজবাড়ী সদর উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা নারী আমেনা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে কোনো ডাক্তার নেই। গত সপ্তাহে এসে ফিরে গেছি, আজও একই অবস্থা। হাসপাতালে আসলেই বলে ডাক্তার নাই।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালে গেলে ডাক্তারের ভিজিট লাগবে ৫০০ টাকা। সেটা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরে যাচ্ছি।'

রহিমা খাতুন নামে আরেক নারী বলেন, 'তিন মাস আগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম, তখন ডাক্তার ছিল না। আজও বলছে ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে এখন বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হবে।'

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিসট্রিক্ট কনসালটেন্টে ডা. আব্দুল কুদ্দুস বর্তমানে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিকিৎসকের পদ রয়েছে একটি। তার সঙ্গে একজন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার সদর উপজেলা থেকে সংযুক্ত করা হয়। এখন এই কেন্দ্রে চিকিৎসকের মধ্যে শুধু একজন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারই রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ৮ মার্চ থেকে গাইনি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় সিজার করার প্রয়োজন হলেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের করণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের যেতে হচ্ছে অন্যত্র।'

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. গোলাম মো. আযম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৮ মার্চ গাইনি চিকিৎসক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি করোনায় মারা গেছেন। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।'

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বাধ্য হয়ে ছুটছেন বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে।

রাজবাড়ী ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, 'গত ১৫ দিনে আমাদের ক্লিনিকে ২৫টি সিজারিয়ান এবং ১০টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।'

এই ক্লিনিকে সিজার করতে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী শহরের লাইফ কেয়ার প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচালক সুধির কুমার বিশ্বাস জানান, ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার প্যাকেজে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। তার ক্লিনিকে গত ১৫ দিনে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে।

লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করানো এক নারী বলেন, 'সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকার বেশি। অথচ, সরকারি হাসপাতালে সিজার হলে এতো টাকা লাগত না।'

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি এবং সমাধানের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শিগগির এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials end strike after govt warning

Following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders, officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown.

4h ago