দুর্দান্ত দিনের শেষ ভাগে অস্বস্তির কাঁটা

Mominul Haque
দলের বিপদ বাড়িয়ে আউট হয়ে ফিরছেন মুমিনুল হক। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সকালের সেশনে দারুণ শুরুটা ধরে রেখে পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিলেন তাইজুল ইসলাম। আগের দিনের বিবর্ণ দশা সরিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে লিডও পেয়ে গেল বাংলাদেশ। তবে দিনের শেষভাগে ম্যাচের রঙ আবারও বদলে গেল। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়ে চার টপ অর্ডার নিয়ে এলেন অস্বস্তির কাঁটা।

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশের হয়েও যেন ঠিক হলো না। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়ার পর ৪ উইকেটে ৩৯ রান তুলে দিন পার করেছে বাংলাদেশ।

হাতে ৬ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের লিড ৮৩ রানের। ১২ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন মুশফিকুর রহিম, ৮ রান নিয়ে তার সঙ্গী অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরী। এই লিড বাংলাদেশ কত বড় করতে পারে তার উপরই নির্ভর করছে ম্যাচের গতিপথ।

৪৪ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছিলেন সাইফ হাসান। তিন বাউন্ডারি পাওয়ার পর তাকে দেখাল বেশ নড়বড়ে। তবে সাইফের আগেই কাঁপন ধরল বাংলাদেশের ইনিংসে। সাদমান ইসলামকে দিয়ে শুরু। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ এই বাঁহাতি। শাহীন আফ্রিদির বলে এলবিডব্লিউর আউট রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। এক বল পরই পীড়াদায়কভাবে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

অধিনায়ক মুমিনুল হক তার পয়মন্ত মাঠে থাকলেন নিষ্প্রভ। হাসান আলির লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট পাতিয়ে তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। ১৫ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট।

সাইফ টিকেছিলেন দশম ওভার পর্যন্ত। তবে যেকোনো সময় তিনি আউট হতে যাচ্ছেন এই আভাস মিলছিল। শট বলে ভীষণ দুর্বল এই ওপেনার বারবার খেলছিলেন দৃষ্টিকটু অ্যাপ্রোচে।

শট বলই কাবু করল তাকে। শাহীনের শট বলে উঠিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। দিনের বাকিটা অনায়াসে পার করে দেন মুশফিক ও ইয়াসির।

এর আগে তাইজুলের ঝলকে সাফল্যের আভায় রাঙানো ছিল বাংলাদেশের দিন। আগের দিনের বিনা উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে নেমে এই বাঁহাতি স্পিনারের ছোবলে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথম সেশনেই ৫৮ রান তুলে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।

দ্বিতীয় সেশনে পড়েছে বাকি ৬ উইকেট। দুই ওপেনারের পর একমাত্র ফাহিম আশরাফই কিছু রান পেয়েছেন। দিনের একদম প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন তাইজুল। 

আগের দিন রিভিউ না নিয়ে আব্দুল্লাশ শফিফকে ফেরাতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছিল বাংলাদেশ। সেই শফিকই এদিন প্রথম শিকার। তাইজুলের প্রায় একই ধরণের ডেলিভারিতে কাবু তিনি। ভেতরে ঢোকা স্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে হন পরাস্ত। এলবিডব্লিউর আবেদন সাড়া দিতে দেরি হয়নি। পরের বলেই আজহার আলিকে ফিরিয়ে দেন তিনি। 

সেঞ্চুরিয়ান আবিদও ফিরতে পারতেন প্রথম সেশনেই। ১১৩ রানে তার ক্যাচ পড়ে যায় স্লিপে দাঁড়ানো শান্তর হাতে। অবশ্য আরেক পাশে আসতে থাকে উইকেট। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে থিতু হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ রান করা বাবর বোল্ড হন মিরাজের সোজা বলে।

লাঞ্চের আগে ফাওয়ান আলমকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ পায় আরেক সাফল্য। বাঁহাতি ফাওয়াদকে আগের বলটা সোজা দিলেও পরের বল টার্ন করিয়ে ভেতরে ঢোকান তাইজুল। বল দিয়েছিলেন একটু ঝুলিয়ে। পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন ফাওয়াদ। বল তার গ্লাভস স্পর্শ করে পায়ে লেগে যাচ্ছিল বেশ খানিকটা বাদিকে স্লিপের দিকে। ছোবল মেরে দারুণ দক্ষতায় সেই ক্যাচ হাতে জমান লিটন। এবারও আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নিয়ে সাফল্য আনতে হয় বাংলাদেশকে।

লাঞ্চের পর পেসার ইবাদত হোসেন আনেন প্রথম ব্রেক থ্রো। এই পেসার বল করেছেন বেশ শৃঙ্খলা মেনে। স্কিলের সীমাবদ্ধতা পুষিয়েছেন লাইন-লেন্থে। ফলও মিলেছে। তার বলে কাবু হন মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ানকে ইবাদত এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আবার চেপে বসেন তাইজুল। এবার তার শিকার ইনিংসের সবচেয়ে মূল্যবান উইকেট। সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়েছিলেন আবিদ। এবার তাইজুলের ভেতরে ঢুকা বল পেছনে সরে খেলতে গিয়ে ভুল হয়ে যায় আবিদের। পরিস্কার এলবিডব্লিউ আবেদনে আঙুল তুলতে সমস্যা হয়নি আম্পায়ারের।

তাইজুল তার পঞ্চম শিকার ধরেন একটা ফাঁদ পেতে। ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তান ছিল কিছুটা থতমত। পেস বোলার হাসান আলি ক্রিজে আসতে কিছুটা ঝুলিয়ে বল করেন তাইজুল। পর পর দুই বলে চার ও ছক্কায় উড়ান হাসান। হাসানকে মারার মুডে নিয়ে পরের বলটিও আরও ঝুলিয়ে করেন তাইজুল। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে উড়াতে গিয়ে গড়বড় হয়ে যায় হাসানের। সহজ স্টাম্পিংয়ে কাটা তিনি।

আগের দিন বিবর্ণ বল করতে থাকা ইবাদত আবার উইকেট নিলে চাপ থাকে বহাল। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার সাজিদ খানকে বোল্ড করে ৮ম উইকেট তুলেন তিনি। তাইজুল খানিক পর আবার এলবিডব্লিউতে ফিরিয়ে দেন নোমান আলিকে। শেষটাই মুড়েছেন তাইজুলই। উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ৩৮ রান করা ফাহিম আশরাফকে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। পাকিস্তান গুটিয়ে যায় তিন সেশনেই।

সফরকারীদের বিপক্ষে এমন সাফল্য মনখোলে উদযাপনের উপলক্ষ আপাতত নেই। ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ায় ম্যাচের বাকি সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জের। হাতে দুই দিন বাকি থাকায় এই টেস্টে ফল প্রায় নিশ্চিত। সেই ফল নিজেদের দিকে আনতে হলে লিড অন্তত আড়াইশ করা চাই বাংলাদেশের। চতুর্থ দিনের সকালটা তাই বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(তৃতীয় দিন শেষ)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ১১৫.৪ ওভারে ২৮৬ (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৮, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, শাহিন ১৩*; রাহি ০/৪১, ইবাদত ২/৪৭, তাইজুল ১১৬/৭, মিরাজ ১/৬৮, মুমিনুল ০/১২)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস:  ১৯ ওভারে ৩৯/৪  (সাদমান ১, সাইফ ১৮, শান্ত ০, মুমিনুল ০, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮* ; শাহীন ৩/৬, হাসান ১/১৯, ফাহিম ০/৬, নোমান ০/৭, সাজিদ ০/১)

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

8h ago