
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের ফলন আশানুরূপ হয়নি। ফলে, এ বছর জেলায় সম্ভাব্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আমের ফল কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আছেন আম চাষিরা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত মৌসুমে ৫ হাজার ২৪০টি বাগানে ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয় ৫৪ হাজার ১৪২ মেট্রিক টন ও ২০২০ সালে ৫ হাজার ২১৫টি বাগানে উৎপাদন হয় ৪৮ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন আম।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাতক্ষীরা জেলায় যে আম উৎপাদন হয় তার ৪০ শতাংশ হিমসাগর। এবার প্রকৃতি আমের সহায়ক ছিল না। বিশেষ করে হিমসাগর আমের জন্য। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাতক্ষীরায় প্রচুর বৃষ্টি হয়। এতে অন্যান্য আমে সমস্যা না হলেও ৫০ ভাগ হিমসাগর গাছে মুকুল আসেনি। এ কারণে আমের ফলন কমবে।'
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, 'লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা পূরণ হবে কিনা মৌসুম শেষ না হলে বলা যাবে না। একসঙ্গে বাজারে অনেক আম ওঠায় দাম একটু কম। তবে, তা খুব কম নয়।'
আম চাষিদের দাবি, গত বছরের চেয়ে এবার ৩৫-৪৫ শতাংশ আমের ফলন কম হয়েছে। এছাড়া, মৌসুমের শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় অশনির শঙ্কায় অনেকে আম পেড়ে ফেলেছেন। ফলে, একসঙ্গে বাজারে বিপুল পরিমাণ আম ওঠায় দরও পাচ্ছেন না তারা।
সাতক্ষীরার শহরতলীর কুকরালি এলাকার আম চাষি মোকছেদ আলী মোড়ল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ১৪টি আম বাগানের আয়তন ৭০ বিঘা। ১৪ লাখ টাকা নিয়ে ১ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। প্রতিটি আম বাগানের পিছনে খরচ হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০টি হিমসাগরের আম বাগান। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও চলতি মৌসুমে ৭০ শতাংশ হিমসাগর গাছে মুকুল আসেনি। ফলে, আমাকে লোকসানে পড়তে হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় অশনির আতঙ্কে আমরা গাছ থেকে গোবিন্দভোগ, লতা, গোপালখাসসহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের আম আগেই পেড়ে ফেলেছি। ফলে, আমের আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। গত বছরের এ সময় গোবিন্দভোগ আম মণ প্রতি দাম ছিল ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা। এবার মৌসুমের শুরুতে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা। আমার ১৪টি বাগানে ৮-১০ লাখ লোকসান হবে।'
সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তদার রওশন আলী জানান, গুটি আম যা দিয়ে আচার, জেলি তৈরি হয়- তারও চাহিদা ছিল। সেগুলোর ভালো মূল্য পেয়েছেন চাষিরা। কিন্তু, হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে ভয় পেয়ে ব্যাপকহারে আম পেড়ে ফেলেছেন চাষিরা। ফলে, বাজারে চাহিদার তুলনায় আমের যোগান বেশি। তাই আম চাষিরা মূল্য কম পাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, তারা ঢাকার কাওরানবাজারে আম পাঠান। এবার সেখানেও চাহিদা কম। এতে আমের ব্যবসা ভালো হচ্ছে না।
Comments