মিশরে বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া সহজের চেষ্টায় দূতাবাস

মিশরে বাংলাদেশি শ্রমিক
মিশরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

মিশরে জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং নবায়ন ফি বেশির কারণে অনিবন্ধিত অনেক বাংলাদেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রক্রিয়া সহজ করতে সব ধরণের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

বিষয়টি দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি ফোরামে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান দূতাবাস কর্মকর্তারা।

গত শুক্রবার ২৩ ডিসেম্বর রাজধানী কায়রোয় দূতাবাসের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, কমিউনিটি সংগঠকসহ মিশরের কয়েকটি এলাকা থেকে আসা প্রবাসীরা ছিলেন উপস্থিত।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'প্রবাসী বাংলাদেশিদের হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর অন্যতম কারণ এই পদ্ধতিটি অনেক সহজ। ব্যাংকের মাধ্যমে ১০০ বা ২০০ ডলার দেশে পাঠাতে প্রায় ১৫টি কলাম পূরণ করতে হয়। এতে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার অনীহা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে শুধু নাম ও এনআইডি ব্যবহার করে বিনা ফিতে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।'

উপস্থিত এক প্রবাসীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় মিশরের জেলখানায় আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।'

তিনি সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব প্রবাসী কর্মীদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতিসংঘের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব কামরুন নাহার বলেন, 'বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের সমস্যা দূর করতে দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে। কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার আগে কাজের নিশ্চয়তা, বেতন-ভাতা জেনে-শুনে যাওয়ার খুব জরুরি।'

তিনি বিদেশে যাওয়ার আগে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে হিসাব খোলার পরামর্শও দেন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, 'মিশর থেকে দেশে বৈধভাবে অর্থ পাঠানোর খরচ অনেক বেশি এবং বৈধ কাগজের প্রয়োজন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা খুলতে যে পরিমাণ ন্যূনতম লেনদেনের প্রয়োজন সে অনুযায়ী মিশরে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী এবং অর্থ লেনদেনের সম্ভাবনা না থাকায় মিশরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব নয়।'

এ প্রক্রিয়া সহজ করতে মিশরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে‌ও জানান তিনি।

দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মুহাম্মদ ইসমাইল হুসাইন প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি সরকারের সুবিধা পাওয়া নিশ্চিত করতে প্রবাসী কর্মীদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার আহবান জানান।

তিনি জানান, মিশরের কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারখানা পরিদর্শন করে তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থান কেনা হয়েছে।

মিশরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক কাজী নূরে আলম বলেন, 'প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীরা অনেক অবহেলার শিকার হন। অনেকে ন্যায্য বেতন-ভাতা পান না। নির্ধারিত কর্ম-ঘণ্টার পরও অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, বিনিময়ে তার মজুরি পান না।'

তার মতে, 'বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সেই দেশের ভাষা-সংস্কৃতি, কাজের ক্ষেত্র ও বেতন-ভাতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন।'

লেখক: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

2h ago