অবৈধপথে ইউরোপ যেতে গিয়ে নিখোঁজ হবিগঞ্জের ২ যুবক

নিখোঁজ দুজন হলেন, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।
অবৈধপথে ইউরোপ যেতে গিয়ে নিখোঁজ হবিগঞ্জের ২ যুবক
নিখোঁজ মাসুদ রানা ও শাহ পাবেল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ হবিগঞ্জ জেলার একই গ্রামের ২ যুবক। তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল। দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।

নিখোঁজ দুজন হলেন, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

মাসুদ রানার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তারা ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই থেকে জাহাজে ইরান পৌঁছায় মাসুদ রানা। মাসুদ ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ি পথ বেয়ে ইরান থেকে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তুরস্ক থেকে ইউরোপের দেশ গ্রিসে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল মাসুদের।

মাসুদ তুরস্কের এক দালালের মাধ্যমে ইরান থেকে তুরস্কে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। একসঙ্গে ৮-১০জন বাংলাদেশিসহ মোট ২৪ জন যুবক ছিলেন তাদের দলে। 

উঁচু-নিচু পাহাড়, মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম তরার সময় তারা নিখোঁজ হন। এরপর থেকে মাসুদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

মাসুদের মা সাজনা বেগম জানান, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে আমার ছেলে যাওয়ার আগে বলেছিল, ''আম্মাগো আমার জন্য দোয়া করিও, পৌঁছে ফোন দিব।' ৬ মাস হলেও ছেলে তো আর ফোন করে না, আল্লাগো আমারের ছেলেরে ফিরাইয়া দেও' তিনি বার বার ছেলের স্মৃতি মনে করে মুর্ছা যাচ্ছিলেন। 

এদিকে একইভাবে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে নিখোঁজ সাতাইহাল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহ পাবেল আহমদসহ ৩৫ জন যুবক ইরান থেকে তুরস্কের পথে যাত্রা শুরু করে। তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় দালাল চক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাহাড়-পর্বত মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তুরস্কে প্রবেশকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। এ সময় ৮ জন যুবক একদিকে লুকিয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে ২৭ জন যুবকের সঙ্গে পাবেল দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেল নিখোঁজ হয়। পাবেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

নিখোঁজ পাবেলের মামা সাইফুর রহমান তালুকদার জানান, শাহ পাবেল আহমদ (২৩) দেশের বাইরে যাওয়ার কিছুদিন আগে তার ছোট ভাই শাহ ফাহিম ও তার মা নাজমা তালুকদার মারা যান। নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বার বার নিষেধ করা পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ইউরোপ যাওয়ার চিন্তা করে। কিন্তু তার ছোট বোন ও ভাইকে মানুষ করার আগেই সে হারিয়ে গেল। ৪ ভাই বোনের মধ্যে পাবেল সবার বড়।

তিনি কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পাবেলের মা মারা যাওয়ার পর আমাদের কাছেই সে বড় হয়েছে, মা হারা পাবেলকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। ইরান অবস্থানকালে ও তুরস্ক যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে ভাগিনার কথা হয়েছে। সে দোয়া চেয়ে বলেছিল, মামা আমি পৌঁছে ফোন দিব, কিন্তু আর তাকে ফোনে পাইনি। তার সঙ্গে থাকা সঙ্গীদের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ তাদের দেখে অভিযান চালালে যে যার মতো দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Why university rankings should matter

Why university rankings should matter

While no ranking platform is entirely comprehensive or flawless, it is better to participate in reliable ones.

7h ago