সময় এসেছে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর

পদ্মা সেতু। স্টার ফাইল ফটো

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর অঞ্চল ভাগাভাগির জন্য পেনসিল ও স্কেল নিয়ে বসে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।

মধ্যপ্রাচ্যের কোন অঞ্চল কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা ঠিক করে নিজেদের সুবিধামতো সোজাসুজি দাগ কেটে নতুন মানচিত্র তৈরি করে তারা। যদিও তারা কেউই সশরীরে  মধ্যপ্রাচ্যে যায়নি। আক্ষরিক অর্থে মানচিত্রেই চলে ভাগাভাগি।

এই সাইকস-পিকো চুক্তি বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের ম্যাপের আকার ঠিক করে দেয়।

বরফ যুগের পর আদিম মানুষ হাতিয়ার তৈরি ও আগুনের ব্যবহার শিখে ফেলায় তাদের জীবনযাত্রা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। দলবদ্ধভাবে পশু শিকার করে নিজেদের মধ্যে মাংস ভাগাভাগি করতে শেখে।

ওসমানী সাম্রাজ্যের পতনের পর আরব অঞ্চল ভাগাভাগির ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও, শক্তিধর দেশগুলো এখন নতুন কায়দায় ব্যবসা-বাণিজ্য ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত।

সাম্রাজ্যবাদ মার্কিনিরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাতে সভ্য জাতিগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে দরিদ্র দেশগুলোকে সুকৌশলে শাসন-শোষণ করছে। বিশ্ব মোড়ল হিসেবে তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে তাবেদার সরকার বসিয়ে শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। 

ডিজিটাল যুগে এসে শাসন-শোষণ পদ্ধতিও ডিজিটাল হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে।

তাদের কাছে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রাধান্য পায় না। যাকে দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে, সেই তাদের পরিকল্পিত দেশের মনোনীত শাসক।

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চার অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তোলে তারা। ক্ষমতার অপব্যবহার, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভিসা নীতি আরোপ ও বিভিন্ন ধরনের স্যাংশন এবং বিভিন্নভাবে স্নায়ুচাপ দিয়ে বাণিজ্যিক অবরোধ দিয়ে চলেছে তারা।

ঔপনিবেশিক শাসকদের চরিত্র অনেকটা একইরকম। আজ আমেরিকা, কাল চীন, পরশু ব্রাজিল বা অন্য কেউ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন নতুন খেলোয়াড় আসে, যারা ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নামে পরিচিত।

বিশ্ব মোড়ল বা মহাজনদের আসল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-অর্থব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ।

চীনে গণতন্ত্র বা মানবাধিকার আছে? সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও স্যাংশন কোথায়? বরং বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চর্চা চীনের চেয়ে অনেক বেশি।

তবে বিশ্বসমাজ ও রাজনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে এক সময়ের শাসিত উপনিবেশ, যাদের নতুন নাম বৈশ্বিক দক্ষিণ। যার প্রতিফলন আমরা সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিওটিও গড়ে তোলে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিকল্পিত পৃথিবীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গতিপথ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে তাদের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না।

এই শূন্যতা পূরণ করতে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নতুন খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে।

এখানে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণের উদিত রাষ্ট্র বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ যোগ দেবে না কেন, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে পৃথিবীর ১২ শতাংশ মানুষ বাস করে। আর বাকি ৮৮ শতাংশ মানুষ বৈশ্বিক দক্ষিণের বাসিন্দা।

আমরা দেখেছি কোভিড-১৯ সংকটের সময় ধনী রাষ্ট্রগুলোর উদ্ভাবিত টিকা দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোকে দান হিসেবে দিলেও, তা উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে তারা অনড় ছিল।

ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও ২৩ বছরের পাকিস্তানি দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালির ইতিহাস বীরত্বের ইতিহাস। দুরন্ত সাহসে উজ্জীবিত আমাদের এই জাতি। 

মার্টিন লুথার কিংয়ের কথায় বলতে হয়-

'শিখতে হয় মাথা নিচু করে, বাঁচতে হয় মাথা উঁচু করে।'

মাহবুবুর রহমান: ডেনমার্ক প্রবাসী; সাধারণ সম্পাদক, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগ ও সংগঠক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ডেনমার্ক
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago