হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ শুরু আগামী বছর

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণের পর উড়োজাহাজ চলাচল বাড়বে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।

তবে জায়গা না থাকায় রানওয়ে দুটি একে অপরের খুব কাছাকাছি হবে এবং দুটি ফ্লাইট একইসঙ্গে অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারবে না।

একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজগুলোকে ৩০-৪০ মিনিটের মতো ট্যাক্সিওয়েতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হয়। এয়ার ট্রাফিকের কারণে কখনো কখনো অবতরণেও দেরি হয়।

'এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে আমাদের পক্ষে ফ্লাইটের সময়সূচি ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। অপারেশনাল খরচও বেড়ে যায়,' বলেন তিনি।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে, ফ্লাইট চলাচল বাড়বে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য নির্ধারিত দূরত্ব মেনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রানওয়ে তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা এয়ার ট্র্যাফিক এবং যাত্রী সংখ্যা সবচেয়ে ভালোভাবে সামলানো যাবে যদি উভয় রানওয়ে একইসঙ্গে ব্যবহার করা যায়।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দ্বিতীয় রানওয়ে নিয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে এবং গত জুলাই মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে এর ফলাফল উপস্থাপন করেছে।

আগামী বছরের মে মাসে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, 'তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে, আরও অনেক যাত্রী যাওয়া-আসা করতে পারবে। এখানে নতুন এয়ারলাইনগুলো কাজ শুরু করবে, এবং আরও অনেক যাত্রী প্রতিদিন বিমানবন্দর ব্যবহার করবে।'

অন্তত ১২টি বিদেশি এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে।

এছাড়া এমিরেটস এবং কুয়েত এয়ারওয়েজ তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে বেবিচকের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে।

কেন একইসঙ্গে ব্যবহারযোগ্য রানওয়ে তৈরির কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এটির জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে প্লেন উড্ডয়ন বা অবতরণ করার জন্য দুটি রানওয়ের মাঝে কমপক্ষে ১ হাজার ৩৫ মিটার দূরত্ব থাকা উচিত।

বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, আইএলএস ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্লাইটগুলো রানওয়েতে অবতরণ করতে পারে। মাঝে দূরত্ব কম হলে দুই রানওয়েতে একইসাথে আইএলএস ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে 'ভিজুয়াল অ্যাপ্রোচ' করা যেতে পারে।

বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর বলেন, 'পরিকল্পিত নতুন রানওয়ের সুবিধা হলো যখন একটি উড়োজাহাজ অবতরণ করবে, তখন অন্যটি দেরি না করে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। এছাড়া জরুরি কারণে একটি রানওয়ে বন্ধ থাকলে, অন্যটি ব্যবহার করা যাবে।'

বেবিচক অতিরিক্ত সংখ্যক উড়োজাহাজ এবং যাত্রীদের সামলানোর জন্য তাদের কাছে থাকা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে কাজ করছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'যখন দুবাই বিমানবন্দর কাজ শুরু করে, তারা একটি রানওয়ে দিয়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন যাত্রী উঠানামা করিয়েছে। এটি দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে সম্ভব হয়েছিল। আমরা বছরে কেবল ৮ মিলিয়ন যাত্রী সামাল দিই। যদি আমরা অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে বর্তমান যে রানওয়ে আছে সেটির মাধ্যমেই আমরা আরও অনেক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারবো।

'আমরা দুটি হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করেছি। আমরা একটি অত্যন্ত অত্যাধুনিক এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করছি যাতে উড়োজাহাজ অবতরণের পর খুব দ্রুত এপ্রোনের দিকে যেতে পারে এবং পরবর্তী উড়োজাহাজকে রানওয়ে ব্যবহারের জন্য কম সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।'

তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে, শাহজালাল বিমানবন্দরের বছরে ২০ মিলিয়ন যাত্রীকে পরিষেবা দেওয়া যাবে। বর্তমানে ৩৩টি এয়ারলাইন্স প্রতিদিন বিমানবন্দর থেকে ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

তবে বিমানবন্দরে দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রানওয়ের জন্য জায়গা রাখা উচিত ছিল এবং জায়গা না ছেড়ে কাছাকাছি রানওয়ে নির্মাণ বড় ভুল বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh asks India to halt border push-ins, cites security concerns

The move follows reports that BSF pushed in around 300 people into Bangladesh between May 7 and May 9

1h ago