খোন্দকার নূরুল আলম

বাংলা গানে নতুনত্বের সাধক

১৭ আগস্ট ২০১৭ আমাদের সংগীতজগতের প্রবাদপুরুষ খোন্দকার নূরুল আলম-এর ৮১তম জন্মদিন। ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান। একাধারে কণ্ঠশিল্পী, সুরস্রষ্টা ও গীতিকবি হিসেবে তাঁর উৎকর্ষের জন্য তিনি ছিলেন এক অনন্যসাধারণ সংগীতজ্ঞ। একুশে পদকসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত এই গুণীজন ২০১১ সালে দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড প্রবর্তিত জীবনের জয়গান আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর ৮১তম জন্মদিনের লগ্নে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি
২০১১ সালে ‘জীবনের জয়গান’ উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তৎকালীন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে করমর্দন করছেন খোন্দকার নূরুল আলম (বামে)। ছবি: স্টার

(১৭ আগস্ট ২০১৭ আমাদের সংগীতজগতের প্রবাদপুরুষ খোন্দকার নূরুল আলম-এর ৮১তম জন্মদিন। ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান। একাধারে কণ্ঠশিল্পী, সুরস্রষ্টা ও গীতিকবি হিসেবে তাঁর উৎকর্ষের জন্য তিনি ছিলেন এক অনন্যসাধারণ সংগীতজ্ঞ। একুশে পদকসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত এই গুণীজন ২০১১ সালে দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড প্রবর্তিত জীবনের জয়গান আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর ৮১তম জন্মদিনের লগ্নে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি)

সংগীতজগতে তাঁর প্রবেশ-লগ্নে খোন্দকার নূরুল আলম নিজের সুরে নিজেই গান গেয়েছেন এবং মাঝেমধ্যে সেইসব গান নিজেই লিখেছেন। পরবর্তীকালে সুরকার ও সংগীতপরিচালক হিসেবেই তিনি হয়ে ওঠেন অনন্যসাধারণ। যৌবনে তাঁর নিজের কন্ঠে গাওয়া “চোখ যে মনের কথা বলে”, “আমি চাঁদকে বলেছি আজ রাতে”, “দু’নয়ন ভরে যত দেখি”, “প্রথম দেখায় লাগলো ভালো” গানগুলো আজও সমান জনপ্রিয়।

খোন্দকার নূরুল আলমের সুর-সাধনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর মৌলিকত্ব। এই মৌলিকত্বের মূলে রয়েছে সংগীত বিষয়ে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য, বহুমাত্রিক সুরের অনুশীলন এবং অহমিয়া (আসাম) ঐতিহ্যের সঙ্গে পূর্ববঙ্গীয় ধারার সফল সংমিশ্রণ। আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের গান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নকল সুরের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভারতীয় হিন্দি, তামিল-তেলেগু, এমনকি নেপাল-ভুটান ও শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় গানের সুরে বাংলা কথা বসিয়ে বাজার মাত করেছেন তাঁর কালের অনেক সংগীতপরিচালক। খোন্দকার নূরুল আলম কখনো তা করেননি। কোনও ছবির পরিচালক এমনটি চাইলে তিনি চুক্তি বাতিল করে সে ছবির সংগীত পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

খোন্দকার নূরুল আলম জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ী শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। উনিশশ সাতচল্লিশের দেশবিভাগের পরপর ১৯৪৮ সালে তাঁর পিতা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নেসারউদ্দিন খোন্দকার সপরিবারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। বাল্যকালেই তিনি তাঁর মা ফাতেমা খাতুনকে হারিয়েছিলেন। কৈশোরে পিতার চাকরি সূত্রে তিনি এ-দেশের নানা শহরে বসবাস করে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষার বিচিত্র রূপ ও রীতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং একে আয়ত্ত করেন অসাধারণ দক্ষতায়।

মেধাতালিকায় সম্মানজনক স্থানসহ নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ এমএ পাশ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাঁর সংগীত প্রতিভার পরিচয় পেয়ে একদল গান-পাগল সিনিয়র-জুনিয়র সহপাঠী তাঁকে নিয়ে মেতে ওঠেন। এরা হলেন: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আনোয়ারউদ্দিন খান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মোস্তফা জামান আব্বাসী, কাজী আনোয়ার হোসেন, রাহাত খান, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তিনি যখন শ্রোতাদের মন জয় করে চলেছেন তখন এক-পর্যায়ে তাঁকে পেয়ে বসে অন্যদের লেখা নতুন গানে সুর করার নেশা। প্রথম মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখা একটি গানে সুর করার পর এর মেলোডি ও পর্ববিন্যাসে দক্ষতা দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিলেন সবাই। তাঁরা একের পর এক তাঁদের লেখা শ্রেষ্ঠ গানগুলো তাঁকে দিতে লাগলেন সুর করার জন্য। ছাত্রজীবনেই বন্ধু আনিসুজ্জামানের পিতা তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান-এর কর্মকর্তা আশরাফউজ্জামানের আগ্রহে কোনও রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই ১৯৬২ সালে রেডিওতে তালিকাভুক্ত হন সুরকার ও সংগীতপরিচালক হিসেবে।

এর কয়েক বছর পর সংগীত প্রযোজকের চাকরি নিয়ে রেডিওতে যোগ দেন। এদেশে টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে ওটাকেও তিনি বেছে নেন তাঁর সংগীত প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে।

খোন্দকার নূরুল আলম গ্রামোফোন কোম্পানি (হিজ মাস্টার্স ভয়েস) এবং রুচিশীল চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকদের নজর কাড়েন অবলীলায়; বিস্তৃত হয় তাঁর সংগীত চর্চার ক্ষেত্র। প্রথম পর্যায়ে তিনি “ইস ধরতি পর”, “ঠিকানা” এবং “উলঝন” নামের তিনটি উর্দু ছায়াছবির সংগীতপরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তারপর একে একে “অন্তরঙ্গ”, “যে আগুনে পুড়ি”, “ওরা এগারো জন”, “জলছবি”, “জীবনতৃষ্ণা”, “সংগ্রাম”, “চোখের জলে”, “শত্রু”, “পিঞ্জর”, “কাজল লতা”, “স্মাগলার”, “দেবদাস”, “চন্দ্রনাথ”, “আঁধারে আলো”, “শুভদা”, “বিরাজ বৌ”, “বিরহ ব্যথা”, “আজকের প্রতিবাদ”, “পদ্মা মেঘনা যমুনা” এবং “শঙ্খনীল কারাগার” নামের বাংলা ছবিগুলোতে সুরকার ও সংগীতপরিচালক হিসেবে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।

লক্ষণীয় যে, এসব ছায়াছবির অনেকগুলোই ক্লাসিক সাহিত্য-নির্ভর এবং রুচিশীল নির্মাতাদের হাতে তৈরি। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি বেতার-টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে স্মরণীয় বহু গান উপহার দিয়েছেন। রেডিওর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও তিনি তাঁর সংগীতসাধনা চালিয়ে গেছেন বহুদিন। কেবল জীবনের শেষ কয়েকটি বছর তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতার কারণে পরিপূর্ণ বিশ্রামে ছিলেন।

তাঁর অর্জিত পুরস্কারের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তিনবার (১৯৮৪, ১৯৮৬  ও ১৯৯১ সালে) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার (১৯৮২, ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার, দুবার (১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে) এশিয়া-প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (আবু) আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে হোসুবাঙ্কা আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং বেতারের নিজস্ব শিল্পী সংস্থার সংবর্ধনা, ১৯৮৮ সালে সিকুয়্যান্স পুরস্কার, ১৯৯১ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে রাজা হোসেন খান স্মৃতি পদক, ২০০৩ সালে সারগাম ললিতকলা একাডেমী সম্মাননা পদক, ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং ২০১১ সালে ডেইলি স্টার-প্রবর্তিত লাইফটাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন তিনি।

সবচেয়ে বড় পুরস্কার তিনি পেয়েছেন তাঁর গানের ভক্ত-শ্রোতা ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল কানাইলাল শীলের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মীয়গণ তাঁর প্রিয় দোতারাটি উপহার দিয়েছিলেন খোন্দকার নূরুল আলমকে, যা তিনি সময় পেলেই ড্রয়িং রুমে বসে বাজাতেন।

খোন্দকার নূরুল আলমের সময়ের সব গুণী শিল্পীই গেয়েছেন তাঁর সুর-করা গান। গানের বাণী নির্বাচনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত রুচিশীল। ১৯৯৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “ভালো বাণী না-হলে সুর করতে পারি না, এটিই আমার সীমাবদ্ধতা... আমার সৌভাগ্য বলতে পারেন শুরু থেকেই বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের কাব্যগুণসমৃদ্ধ গানে সুর করার সুযোগ পেয়েছি আমি; এরা হলেন আহসান হাবীব, হাবীবুর রহমান, সিকানদার আবু জাফর, শামসুর রাহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ রকিকউজ্জামান থেকে আজকের আবিদ আনোয়ার।”

বাংলা গান বাণীপ্রধান-এই মহাসত্য উচ্চারিত হয়েছিলো রবীন্দ্রনাথের মুখে। আরোপিত সুরের কারণে বাণী হারিয়ে গেলে আধুনিক গানের শ্রোতার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। গান কালোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে এর বাণীর অন্তর্নিহিত কাব্যময়তার গুণে এবং বাক্যের পর্ববিন্যাস (স্ক্যানেশান)-এর সাবলীলতা ও স্বাভাবিকতার কারণে। এই সত্য পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করেছিলেন উচ্চশিক্ষিত সুরকার খোন্দকার নূরুল আলম। বাদ্যযন্ত্রের দাপটে কিংবা অসঙ্গত পর্ববিন্যাসে যেন গানের বাণী হারিয়ে না যায় সেদিকে তাঁর কড়া নজর ছিলো। তাই এতসব সমৃদ্ধ গান সৃষ্টি হয়েছে এই অনন্যসাধারণ সংগীতজ্ঞের সুরকে ধারণ করে।

জনপ্রিয়তা সবসময় গানের গুণগত মানের পরিচায়ক নয়। খোন্দকার নূরুল আলমের সুরের ছোঁয়ায় যেসব গান প্রাণ পেয়েছে তার অনেকগুলোই জনপ্রিয় গানের তালিকায়ও স্থান পেয়েছে,  যেমন  “চোখ যে মনের কথা বলে”, “পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরণা বলো”, “আমার মন পাখিটা যায়রে উড়ে যায়”, “স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে”, “ফসলের মাঠে মেঘনার তীরে”, “নদীর মাঝি বলে”, “তুমি নেই বলো কার সাথে করি সাঁঝের আলোর তুলনা”, “নীরবতা শুধু ঢেকে রয় যেন”, “বাউল কই বাউল কই বইলা কান্দে নিমের দোতারা” এবং “আমার বাউল মনের একতারাটা”।

এছাড়াও, খোন্দকার নূরুল আলমের সুরে রয়েছে “পোড়া চোখ কেন তুই অন্ধ থাকিস না”, “আমি জলের কাছে প্রশ্ন করি”, “নদীর ধারে পথ, পথ পেরিয়ে গাঁ”, “অনেক বড়ো ঘরণীও ঘর পায় না”, “আমরা দুরন্ত একঝাঁক রৌদ্রের উজ্জ্বলতা”, “যদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করে”, “তুমি এসেছো, বহুদিন পর আমি কাঁদলাম”, “আহা কাঙ্খে কলসী”, “কত হাজার বছর ধরে”, “আকাশটা তো নীল চিঠি নয়”, “জনম জনম ধরে” এবং “এত সুখ সইবো কেমন করে”।

“তুমি এমনি জাল পেতেছো সংসারে”, “তুমি যদি বলে দিতে”, “নীরব পৃথিবী দোয়ারে তোমার”, “এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে”, “এ কী মনিহার এনে দিলে”. “এ আঁধার কখনো যাবে না মুছে”, “তোমার এ উপহার আমি চিরদিন”, “কাঠ পুড়লে কয়লা হয়” এবং “একটা ফুলে হয় না তোড়া”, “ফুলের আড়ালে ছিলো বিষকাঁটা”, “শুধু রৌদ্র কি পারে রাঙাতে রঙধনু”, “আমি সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে অনেক করেছি ফন্দি” এবং “কাঁটার আঘাত লাগবে জেনেই চাও না নিতে লালগোলাপের ঘ্রাণ” গানগুলোও শ্রোতাদের মনে গেঁথে রয়েছে।

এমন অনেক গান তিনি নির্মাণ করেছেন যার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন একটি ব্যাপক গবেষণার বিষয়। এ তালিকায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যাবে অধিকাংশ গানের রচয়িতা মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। ষাটের দশকে এই অনন্যসাধারণ গীতিকবির উত্থানের সঙ্গে খোন্দকার নূরুল আলমের সংগীতসাধনাও বেগমান হয়। বহুকাল এই জুটি বেতার-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের গানকে সমৃদ্ধ করেছেন।

কাব্যগুণসম্পন্ন গান বরাবরই জনপ্রিয় হতে বেশ সময় নেয়। খোন্দকার নূরুল আলমের সুর-করা অনেক গান রয়েছে যেগুলো প্রচলিত অর্থে জনপ্রিয় নয় কিন্তু সেগুলোর সুরেও রয়েছে বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর যা অনুধাবন করতে পারেন কেবল প্রকৃত সংগীতবোদ্ধাগণ।

খোন্দকার নূরুল আলম আজ বেঁচে নেই কিন্তু তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর সৃষ্ট গানগুলোর জন্য যতদিন মানুষ বাংলা ভাষার গান শুনবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago