এখনো অনেক পথ বাকি

সময় বদলে যাচ্ছে। বেগম রোকেয়া এখন জন্ম নিচ্ছেন প্রতি ঘরে ঘরে। পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে যে নারীরাও এগিয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ দেখা যায় সবখানেই। কিন্তু নারীরা পাচ্ছে না তাদের সেই কর্মের যথাযথ মর্যাদা। মর্যাদার জন্য লড়াই করতে হয় প্রতি মুহূর্তেই। নারীদের এই অবস্থান নিয়ে কথা হচ্ছিল মিথিলার সঙ্গে। একইসঙ্গে সংসার, সন্তান, অভিনয়, গান, চাকরি সবই সমান্তরালভাবে চালিয়ে যিনি প্রমাণ করেছেন একজন নারী ঠিক কতটা করতে পারে। সঙ্গে ছিলেন রাফি হোসেন

মিথিলা; ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল; মেকআপ ও স্টাইলিং : ফারজানা মুন্নি, কিউবেলা

রাফি হোসেন : তাহসান আর তোমার সম্পর্ক কত বছরের?

মিথিলা : ১৫ বছর। আমাদের বিয়ের ১১ বছর পূর্তি হবে এ বছর।

রাফি হোসেন : তোমার এই ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় সম্পর্ককে তুমি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবে?

মিথিলা : একটা সম্পর্কে বন্ধুত্বটাই আসল।

রাফি হোসেন : এটা কখন নষ্ট হয়?

মিথিলা : একটা সম্পর্কের শুরুতে দু’জনের দু’জনের প্রতি প্রেম আর আকর্ষণ থাকে। দীর্ঘ সময়ের সম্পর্কে সেই আকর্ষণটা আর থাকে না। তার সঙ্গে আমার দেখা করতেই হবে, কথা বলতেই হবে এমন অনুভূতিগুলো কমে যায়। এক ছাদের নিচে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে দু’জন দু’জনের অস্থিমজ্জা সব কিছুই জেনে যায়। তখন আকর্ষণ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন সময়ে নিজেদের সম্পর্ক সুন্দর রাখতে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো বন্ধুত্ব। সেই সময় ভালোবাসা আর থাকে না তা আমি বলব না, কিন্তু তা একটা অন্য লেভেলে চলে যায়। এই লেভেল পরিবর্তনের কারণে ভালোবাসাটা আপনি আর শুরুতে যেমন অনুভব করতেন, তেমন অনুভব করতে পারবেন না। তাকে দেখলেই শিহরণ জাগবে না। তবে একটা ভালো লাগা তো কাজ করেই, যার অনুভূতিটা হয়তো একটু ভিন্ন রকমের হয়।

রাফি হোসেন : সবাই তো এই বন্ধুত্বে পৌঁছতে পারে না। ফলে সম্পর্কে দূরত্ব এলেও বেশিরভাগ মানুষই আলাদা না হয়ে অভ্যাসবশত মুখ বুজে সেই সম্পর্কই টেনে নিয়ে যায়। কিংবা তাদের ভেতরে হয়তো আলাদা হওয়ার সাহস থাকে না সামাজিকতার কথা ভেবে। আমার মনে হয় তারা যদি সুযোগ পেত তাহলে হয়তো বেশিরভাগ মানুষই এমনভাবে থাকত না। তোমার মতে, দু’জন মানুষ কখন এমন বন্ধুত্বে পৌঁছতে পারে?

মিথিলা : আমার মনে হয় না যে সুযোগ পেলেই বেশিরভাগ মানুষ এমন সম্পর্ক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিত। প্রতিটা মানুষেরই নির্ভরতার একটা জায়গা লাগে। দেখা যায়, অনেকে বাবা-মার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, ফলে আর কিছুর দিকেই তাদের নজর থাকে না। অনেকে নির্ভরশীল তার সঙ্গীর ওপর। সঙ্গীর ওপর এমন নির্ভরশীলতা থাকলেই দু’জন মানুষ দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকে। এই নির্ভরশীলতা শারীরিক বা মানসিক যে কোনোটাই হতে পারে।

মিথিলা; ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল; মেকআপ ও স্টাইলিং : ফারজানা মুন্নি, কিউবেলা

রাফি হোসেন : নারীর ক্ষমতায়ন এখন অনেকটাই হয়েছে এবং হচ্ছে। আমার ধারণা, আরো আগে থেকে এমনটা হলে হয়তো অনেকেই এভাবে থাকত না। নারী স্বাধীনতার ফলে অনেকের কাছে যে বিষয়গুলো ছোট তা আমার অনেকের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়।

মিথিলা : একটা খুব সাধারণ সামাজিক নিয়ম দেখেন যে, মেয়েদেরকে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের ভেতরেই এমন চিন্তা থাকা জরুরি যে দু’জনই দু’জনের পরিবারকে ভালোবাসবে এবং সম্মান করবে। দু’জনের ভেতরেই এই চিন্তা না এলে তো আর হবে না। সবাই যদি চিন্তা করে যে মেয়েটা যেহেতু ছেলের বাড়িতে গিয়ে উঠবে সেজন্য সেটাকে নিজের বাড়ি বলে মনে করবে। ছেলের বাবা-মাকে মেয়েটা খুবই সম্মান করবে কিন্তু ছেলেটার বেলায় মেয়ের বাবা-মাকে সেই সম্মান না করলেও চলবে। এখান থেকেই  বৈষম্যটার শুরু হচ্ছে।

রাফি হোসেন : আমি সেটাই বলছিলাম, আগে নারীরা এমন সবই মুখ বুজে সয়ে যেত। কিন্তু এখন তারা কথা বলছে তাদের এমন সব সমস্যা নিয়ে।

মিথিলা : এখন আসলেই কথা বলার সাহস করছে। নিজেদের প্রাপ্য বিষয়ে নারীরা এখন কথা বলছে। যে বিষয়টি মেনে নেয়ার মতো না তা কেন কেউ মানতে চাইবে?

রাফি হোসেন : ছেলেদের ভেতরে অনেকেরই কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তুমি যেটা বলেছ, বিয়ের পর মেয়েটি ছেলের বাসায় ওঠে এটার বিপরীতটা কেউ মানতে পারছে না। সেখানে পৌরুষত্বে হয়তো আঘাত হানে। কিংবা থাকলে সমাজের মানুষ কী ভাববে তা নিয়েও একটা চিন্তা থাকে। এই পরিবর্তনটা শুধু ছেলেদের ভেতরেই আনতে হবে তা না, মেয়েদের ভেতরের এই বিষয়ে পরিবর্তন আনা জরুরি। আমার ঘরের কথাই যদি বলি, আমার মাকে যতই জোরাজুরি করা হোক তিনি কখনই আমার বোনের বাসায় রাতে থাকেন না। তার দৃষ্টিতে ওটা মেয়ের বাসা, ছেলের বাসার মতো দাবি সেখানে দেখানো যাবে না।

ভিন্ন বিষয়ে আসি। তুমি পড়াশোনা, সংসার, সন্তান, ক্যারিয়ার সব এক সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছ। এত কিছুর প্রতি তোমার আগ্রহ জন্মাল কীভাবে?

মিথিলা : আমার আগ্রহ অনেক বিষয়ে। আমার গানের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। গানটা আমি ঠিকমতো করতে পারিনি। যার কারণে আমার একক কোনো অ্যালবাম নেই। আমার যখন বিয়ে হয় তখন বয়স ২৩ বছর। বিয়ের পর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করেছি। চাকরিও করেছি। এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াতে কাজ করার জন্যও সময় বের করেছি। যার কারণে গানের পেছনে যথেষ্ট সময় দেয়া আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

মিথিলা; ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল; মেকআপ ও স্টাইলিং : ফারজানা মুন্নি, কিউবেলা

রাফি হোসেন : অভিনয়ে কীভাবে এলে?

মিথিলা : অভিনয়ে আসা মূলত বিজ্ঞাপন থেকে। প্রথম ২০০৪ সালে অমিতাভের সঙ্গে একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। অমিতাভ আমাদের পারিবারিক বন্ধু। সেই সুবাদেই ওর সঙ্গে কাজ করা হয়। এরপর নাটকে সম্পৃক্ত হওয়া।

রাফি হোসেন : পড়াশোনাতেও তোমার ফলাফল অনেক ভালো। এত কাজের সঙ্গে ভালো ফলাফল করা খুব কঠিন। তোমার ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে হলো?

মিথিলা : আমার যত নেগেটিভ আবেগ আছে তার সবগুলোকে পজেটিভ করে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। চাপের মধ্যে থেকে কাজ করা আমি উপভোগ করি। যার কারণে কোনো অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন আমার খুব ভালো লাগে। এমন চাপের কারণে আমি অন্য সবকিছু থেকে নিজের কনসেনট্রেশন সরিয়ে শুধু ওই কাজটাই মনোযোগ দিয়ে করি। ইউনিভার্সিটিতে আমার ফ্যাকাল্টিরা কোনোদিন আমি ডেড লাইস মিস করেছি তা বলতে পারবে না। চেষ্টা করি ডেডলাইনের আগে কাজ জমা দিতে, এমনকি এটা আমার অফিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

রাফি হোসেন : এত কিছু একসঙ্গে ব্যালান্স কর কীভাবে?

মিথিলা : আমার অফিস সপ্তাহে পাঁচ দিন। বাকি দু’দিন ছুটি থাকায় অন্যান্য কাজ এই সময়ে করি। নাটক তো আর খুব বেশি করি না। বছরের বিশেষ দিবসের জন্য কাজ করি। ভ্যালেন্টাইনের জন্য নাটকে অভিনয় করলাম, সামনে ঈদের জন্য করব। আমি সবসময়েই আমার অফিসটাকে বেশি গুরুত্ব দেই। অফিসে সমস্যা করে আমি কোনো কাজ করি না। আর আমি যখন অফিসে যাই তখন আমার বাচ্চাকে  সঙ্গে নিয়েই বের হই। আমার কাজের সময়টুকু ও ডে-কেয়ারে থাকে। আমার যখন ইচ্ছে হচ্ছে গিয়ে দেখে আসছি বা ফোনে খবর নিচ্ছি। ফলে ওর জন্যও কোনো সমস্যা হয় না।

রাফি হোসেন : বাবার সঙ্গে ওর সম্পর্ক কেমন?

মিথিলা : ওদের দারুণ সম্পর্ক। বাবার গানের দারুণ ভক্ত সে। যেকোনো জায়গাতে ওর বাবার গানের সুর শুনলেও বুঝে ফেলে, একদম চুপ হয়ে শুনতে থাকে। তাহসানও তো সারাদিনই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যখনই বাসায় আসে তখনই আমার মেয়ের লাফালাফি শুরু হয়ে যায়।

মিথিলা; ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল; মেকআপ ও স্টাইলিং : ফারজানা মুন্নি, কিউবেলা

রাফি হোসেন : কাজ নিয়ে তোমার সামনের পরিকল্পনা কী?

মিথিলা : আমি এখন যা করছি তাই নিয়মিত করে যেতে চাই। তবে পিএইচডি নিয়ে এখনো কিছু সিদ্ধান্ত নেইনি। মাস্টার্সে আমার পাঠ্য বিষয় ছিল ‘আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট’। আমি বাচ্চাদের নিয়েই কাজ করে যেতে চাই। বিভিন্নভাবে তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই, যেমনটা এখনো করছি। এখন তো আমি বাচ্চাদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। তবে আমার রেডিও এবং টিভি প্রোগ্রামের জন্য পরিকল্পনা আছে। বাচ্চাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন বিষয় প্রমোট করতে চাই। এর জন্য অভিভাবকদের কিছু সচেতন করার বিষয়ে কাজ করতে চাই। মিডিয়ার কাজের কথা যদি বলি নাটক এখন যেমন বেছে করছি সেভাবেই করে যাব।

রাফি হোসেন : এখন তো মিডিয়ার অবস্থাও একটু খারাপ।

মিথিলা : এটা আসলে ব্যক্তি ভেদে হতে পারে।

রাফি হোসেন : দর্শকরা বাংলাদেশের চ্যানেল বা প্রোগ্রাম দেখছে না। এজন্য বিভিন্ন মিটিং-মিছিলও হচ্ছে।

মিথিলা : এটা তো ভালো। দর্শক হারানোর বিষয়ে তারা কথা বলছে। তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে। এর পেছনে আসলে আমাদেরও কিছু দোষ আছে। এতগুলো চ্যানেল খুলে রেখেছে যে, এত ভালো প্রোগ্রাম এখন আর পাচ্ছে না। এতগুলো চ্যানেল ভরানোর জন্য সবাই বাজেট কমিয়ে ফেলেছে। কম বাজেটের নাটক বানাচ্ছে সবাই। কম বাজেটের নাটক স্বাভাবিকভাবেই আর দর্শক তেমনভাবে টানতে পারছে না।

রাফি হোসেন : তুমি তো বরাবরই বেছে বেছে কাজ করতে এবং এখনো তাই করছ।

মিথিলা : আসলে এখন যে সমস্যার কথা আপনি বলছেন এটা মিডিয়াতে আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না। আর আমি আসলে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন নিয়ে কাজ করি না। আমি অল্পতেই খুশি। আমি যে এনজিওতে কাজ করি সেখানকার বেতন করপোরেট দুনিয়ার তুলনায় অর্ধেক। আমি কাজ করি তাদের জন্য যাদের আসলেই প্রয়োজন। এটা আমাকে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি দেয়। মিডিয়ার ক্ষেত্রে সেই হিসাবটাই যদি করি, আমি বর্তমানে যে টাকা পাই তা লিডিং অভিনয় শিল্পীদের সমান। সুতরাং এটাকেই যদি পেশা হিসেবে নিয়ে প্রতিদিন অভিনয় করতাম তাহলে আমার নিজের গাড়ি বাড়ি হয়েও যেতে পারত। কিন্তু আমার ইচ্ছা বেছে কিছু ভালো কাজই শুধু করা। এটাও আমাকে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি দিচ্ছে। সেই প্রশান্তির জন্যই আমার কাজ করা। অল্প সময়ে যারা অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করছে তাদের কাছে এটা মনে হতেই পারে যে এই জায়গার অবস্থা খারাপ। আমি হঠাৎ করে কিছু চাইলে তার খারাপটাই শুধু আমাকে দেখতে হবে। আমার ফলাফল ভালো, এজন্যই আমি চিন্তা করতে পারি না যে আমাকে অনেক বেশি টাকা বেতন দিতে হবে। কয়েকটা নাটকে কাজ করে কিছু শিখেছি বলেই আমি হঠাৎ করে পরিচালক হয়ে যেতে পারব না। আমাদের সবার জীবনই অনেক ছোট। এই ছোট জীবনে যে কাজটাই করব সেটা খুব ভালোভাবে শিখে করা উচিত।আর টাকার পেছনে দৌড়ালে কেউ কখনো শান্তিতে থাকতে পারে না। যার কারণে আমি ধীরে ধীরে নিজের সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।

রাফি হোসেন : গান নিয়ে কী পরিকল্পনা করেছ?

মিথিলা : গত দুই ঈদেই নাটকের গান করেছি, লিখেছিও। ভ্যালেন্টাইন দিবসের একটা নাটকের জন্য গান লিখেছি। এভাবেই গান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। গানকে কখনো খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করিনি। এজন্য এটা নিয়ে বেশিদূর এগোনো হয়নি। সামনে হয়তো করতে পারি, দেখা যাক কী হয়। সব কিছুর সঙ্গে সময় মিলিয়ে যদি এটার জন্য আলাদা সময় বের করতে পারি তাহলেই করব। কারণ কিছু করলে তা ভালোভাবেই করতে চাই। পরিকল্পনা বলতে এটুকুই।

মিথিলা; ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল; মেকআপ ও স্টাইলিং : ফারজানা মুন্নি, কিউবেলা

রাফি হোসেন : পাঠকদের জন্য আর কিছু বলতে চাও?

মিথিলা : পাঠকদের জন্য তো অনেক কিছু বলার আছে। তবে এটা অবশ্যই বলতে চাইব যে, যেকোনো কাজ শুধু করার জন্য না করে যতটুকুই করবেন ভালোভাবে করুন। আমি আমার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছি কারণ আমি শুধু পড়ার জন্য পড়িনি। আমি শেখার জন্য পড়েছি। আমি আমার পড়ার বিষয়টাকে বেশ উপভোগ করেছি। গল্পের বই আমরা যেমন পড়ি, কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়া। তেমনিভাবে দুশ্চিন্তা না করে নিয়মিত পড়ার বিষয়টাও উপভোগ করা উচিত। এতে ফলাফল ভালো হবেই। আমি অনেক কিছু করি। এজন্যই সবাইকে আমি এই পরামর্শ দেব না যে, আপনিও অনেক কিছু করুন। আমার পরামর্শ থাকবে নিজেকে ভালোবাসতে শিখে নিজের প্রাধান্য বুঝে যতটা পারবেন ততটা করুন। তবে যা-ই করবেন তা ভালোবেসে করুন।

বাংলাদেশের মেয়েদের অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যক্তিগত সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের এখনো অনেক অনেক দূর যেতে হবে নারী-পুরুষের সমতার জন্য, সেই সমতার জন্য যে সমতার কথা আমরা সব সময়ই বলি। এখনো আমরা যে সমাজে আছি সেখানে নারীদের কত ধরনের সমস্যা আছে, নারীরা কতটা পিছিয়ে আছে তা একেবারে সবারই চোখের সামনে। এটা দেখার জন্য কোনো রিসার্চ করার দরকার হয় না। পাশের ঘরে উঁকি দিলেই দেখা যায়। এটা পুরুষ এবং নারী উভয়ের কারণেই হচ্ছে।

এভাবেই অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরা এগোচ্ছে। তারা চাইলেই একবারে তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমার মনে হয় তাদের ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনে এগোনো দরকার। এতে আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন সত্য করতে পারব।

রাফি হোসেন : মেয়েদের এখনো যে প্রতিবন্ধকতা, তা কেন?

মিথিলা : এটা আসলে আমাদের মানসিক চিন্তার পরিবর্তন না হওয়ার ফল। আপনি দেখেন আমাদের দেশের নাটকে কয়টিতে নারী চরিত্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়। পরিচালক বা লেখক প্রায় সবাই পুরুষ। তারা তাদের চিন্তায় যে গল্প আনে তা হয় মূলত পুরুষ কেন্দ্রিক। ফলে নাটকগুলোও সেভাবেই চলে। নাটকে আমাদের চরিত্র এমন যে নায়কের সঙ্গে শুধু নায়িকা হিসেবে থাকা।

রাফি হোসেন : দু’একজন নারী পরিচালক যারা আছে তারাও ঠিক নারী চরিত্রকে তেমনভাবে তুলে ধরতে পারছে না।

মিথিলা : মিডিয়ার মতো মানুষের বাসা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই পুরুষ প্রাধান্য হওয়াতে নারীরা শুধুই পিছিয়ে। যে অবস্থা এখনো আছে তাতে আমার মনে হয় আরো ১০০ বছর লাগবে এই অবস্থার থেকে নারীদের পরিত্রাণ দিতে।

রাফি হোসেন : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ দেশ পরিচালনার আরো অনেক জায়গাতেই কিন্তু নারীরা বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন।

মিথিলা : এটা আসলে একটা ভালো উদ্যোগ এবং অবস্থান। কিন্তু এটা ঠিক সবার মানসিক পরিবর্তন আনছে না। আপনি দেখবেন যে একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সমালোচনা বেশি করে। কখনো আপনি শুনবেন না যে জামাই এবং শ্বশুরের মধ্যে কোনো সমস্যার গল্প। কিন্তু বৌ এবং শাশুড়ির মধ্যে সমস্যার কথা শুনবেন প্রায় প্রতিটা ঘরেই। এখানেও পরিবর্তন আনতে হবে। এখন মেয়েরা বাসার বাইরে যাচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা করছে। ফলে নারীর আর্থিক স্বাধীনতা আসছে। নারীর যখন আর্থিক স্বাধীনতা আসছে তখন তার স্বামী বা শাশুড়ি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে যা তাদের ভেতরে ক্রোধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর সম্ভবত এই ক্রোধটাই এখন নারীর ওপর হওয়া নৃশংসতা বৃদ্ধির কারণ। এজন্য পুরো সমাজেই আলোচনা দরকার। নারীর সঙ্গে পুরুষের আলোচনা, ছোটদের সঙ্গে বড়দের আলোচনা। সবার সঙ্গেই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার যাতে সবার ভেতরে মানসিক পরিবর্তন আসে।

রাফি হোসেন : সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করি তোমার এই দৃপ্ত কথাগুলো কিছু মানুষের ভেতরে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।

মিথিলা : আমারও প্রত্যাশা নারী-পুরুষের সমতার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ হোক। যে সমাজে আমরা সবাই রাজা। সবাই মিলে ভালো থাকব।

 

অনুলিখন : আব্দুল্লাহ আল আমীন

Comments