পরিচ্ছন্ন সুস্বাস্থ্যকর ঈদ

ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে  ঈদের প্রস্তুতির মাধ্যমেই। গৃহিণীরা ঈদের দিন কী খাবার তৈরি করবেন সে মেন্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেন। নিজেদের সঙ্গে ঘরের জন্য অনেক নতুন প্রয়োজনীয় জিনিসের আগমন ঘটে...

আনন্দে মেতে উঠি ঈদ উৎসবে। এই একটি উৎসব সেখানে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্যই আনন্দের। নতুন কাপড় থেকে শুরু করে ঈদের দিনের স্পেশাল খাবার মেন্যু আর সালামি সব কিছুতেই সবার আনন্দ একসঙ্গে। এবার তো কোরবানির ঈদ। তাই বাড়িতে গরু-ছাগলের আগমন ঘটবে ঈদের দু’তিন দিন আগে থেকেই। রান্নার ক্ষেত্রেও তাই মাংসের আইটেম থাকবে বেশি। এই ঈদে সাধারণত দেখা যায় খাবার টেবিলে কাবাব আইটেম বেশি থাকে, সঙ্গে রেজালা, ভুনা মাংস, আচারি মাংস, কোরমা আরো দারুণ দারুণ মজার খাবার। নাম মনে হতেই যেন জিভে জল এসে গেল। ঝাল খাবার ছাড়াও নানা রকম সুদৃশ্য মিষ্টান্নের ভা-ার সাজানো হয়। একটা সময় ছিল সেমাই-পায়েস দিয়েই ঈদ পার হয়ে যেত। কিন্তু বাড়িতে বাড়িতে গৃহিণীরা রান্নায় নানা নতুনত্ব আনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশনেও বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। খাবার টেবিলের সামনে দাঁড়ালে এখন চোখের-মনের তৃপ্তি তো হয়ই। আর খাবার গ্রহণের পর  ভোজনের তৃপ্তিও হয় বৈকি। এসব আনন্দের মধ্যেও আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে জীবাণুমুক্তভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা। খাওয়ার আগে ছোটদের থেকে শুরু করে বড়রা পর্যন্ত সবারই লাইফবয় দিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসতে হবে। এতে আপনি জীবাণুমুক্তভাবে খেতে বসবেন। কারণ পরিষ্কার হাতে না খেলে নানা জীবাণু খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। শুধু খাওয়ার আগে নিজ হাত ধুলেই হবে না, সঙ্গে পরিবারের সব সদস্যকে এ ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলতে হবে। যিনি রান্নার দায়িত্বে থাকবেন তাকে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। রান্না করতে হবে পরিচ্ছন্নভাবে। রান্নার আগে হাঁড়ি ধুয়ে নিতে হবে। নিজের হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে রান্না শুরু করুন। রান্নার উপকরণ, স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত না করে রান্না শুরু করবেন না। মনে রাখবেন আপনার হাতেই পরিবারের সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। তাই রান্না সুস্বাস্থ্যকর, উপাদেয় আর পরিচ্ছন্ন হলে আপনারই আনন্দ।


কোরবানির ঈদে একটু আলাদা ব্যস্ততা দেখা যায় ঘরে ঘরে। সেই সঙ্গে গরু-ছাগল কেনার জন্য হাটে যাতায়াত শুরু হয়। পছন্দমতো, বাজেটের সঙ্গে মিল রেখে কিনতে হয় গরু-ছাগল। আর হাটে যাওয়ার জন্য ঘরের ছেলেদের মধ্যে একটা আলাদা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায় সব সময়ই। তবে খেয়াল রাখতে হবে হাট থেকে ফিরে ঘরে ঢোকার আগেই স্যান্ডেল বাইরে খুলবেন। আর ভালোভাবে শ্যাম্পু-সাবান দিয়ে পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্তভাবে গোসল সেরে নেবেন। যে কাপড় ও স্যান্ডেল পরে হাটে গিয়েছিলেন, সেগুলো ধোয়ার জন্য দিন। তাহলে ঘর জীবাণুমুক্ত থাকবে। বাইরে কোরবানির পশু ধরে আবার সে হাতেই খাবার গ্রহণ করবেন না। বাইরে তো নয়ই, ঘরেও না। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় থাকে। বাসায় এসে গোসল করে এবং খাওয়ার আগে লাইফবয় দিয়ে হাত ধুয়ে তবে খাবার মুখে দিন।


ছোটদের দিকেও এক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। ছোটরা বাড়িতে ঈদের আগে আনা গরু-ছাগল নিয়ে দারুণ আকর্ষণ বোধ করে। ঘরে ধরে রাখা যায় না। কখন কাছে থেকে গরু-ছাগল দেখবে, গায়ে হাতে বুলাবে বা ছাগলকে গাছের পাতা খাওয়াবে এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তাই শিশুদের দিকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। শিশুরা হয়তো ময়লা হাতেই দৌড়ে এসে খাবারে হাত দিয়ে বসবে, সেক্ষেত্রে বড়দের এগিয়ে আসতে হবে তাদের পরিচ্ছন্ন আর জীবাণুমুক্ত করার জন্য। কারণ ছোটরা তাড়াতাড়ি রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই তাদের আনন্দকে মাটি না করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। কারণ ঈদের দিনে অসুস্থ হয়ে থাকলে পুরো পরিবারের ঈদের আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়।


ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ঈদের প্রস্তুতির মাধ্যমেই। গৃহিণীরা ঈদের দিন কী খাবার তৈরি করবেন সে মেন্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেন। নিজেদের সঙ্গে ঘরের জন্য অনেক নতুন প্রয়োজনীয় জিনিসের আগমন ঘটে। ঘরের ধুলো-ময়লা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজগুলো পরিষ্কার করে ফাঁকা করে রাখুন, কারণ মাংস রাখতে হবে। সঙ্গে রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত রাখুন প্রতিদিন। এখান থেকে আপনি পরিবারের সুস্থতা কন্ট্রোল করতে পারবেন।
ঈদের দিনে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে আলাদা খাবার তৈরি করুন, যেন খাবার টেবিলে আর খাবার খাওয়ার প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে শেখাতে হবে প্রতিবেলায় খাওয়ার আগে যেন লাইফবয় দিয়ে হাত  ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে পরিবারকেই শেখাতে হবে। ছোটরা হয়তো ময়লা হাতেই খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবে বা বাইরের খোলা খাবারের দিকে আকর্ষিত হবে। সেক্ষেত্রে তাদের জীবাণুমুক্ত থাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রোগজীবাণুমুক্ত থাকার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বাথরুম থেকে বের হয়ে অবশ্যই যেন বাচ্চা সাবান দিয়ে হাত ধোয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। ছোটদের জীবাণুমক্ত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করতে প্রয়োজনে কোনো পুরস্কার বা তার পছন্দমতো খাবার তৈরি করে দিতে পারেন। এতে বাচ্চার আগ্রহ বাড়বে পরিচ্ছন্নতার দিকে।


 কোরবানির ঈদে খাবার টেবিলে মাংসের আইটেম বেশি থাকে। সঙ্গে তৈরি করতে পারেন, টকদই দিয়ে লাসিস, যা হজমে সাহায্য করবে। মাংসের সঙ্গে আকর্ষণীয় সালাদ তৈরি করতে পারেন তাহলে কিছুটা ব্যালান্স হবে। আর পরিমাণমতো খাবার গ্রহণ প্রয়োজন। টেবিল ভরা খাবার সাজানো থাকলেই যে পুরো পেট পুরে খেতে হবে তা নয়। বরং পেটে খালি জায়গা থাকে এমনভাবে খাবার গ্রহণ করুন। কোরবানির এই ঈদে মাংস রান্নাই প্রাধান্য পায় এবং মাংস খাওয়া হয় বেশি। তাই নিজেকে বিরত রাখুন অতিরিক্ত মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে। মাংসের সঙ্গে সালাদ বেশি পরিমাণে খান। খাবারের মেন্যুতে সালাদ, সবজি রাখুন আর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। অবশ্যই খাওয়ার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করে ধুয়ে খেতে বসুন।
 কোরবানির সময় রান্নাঘরে কাঁচা মাংসের স্তূপ জমে যায়। গৃহিণীরা নিজের সুবিধামতো ভাগ করে মাংস ফ্রিজে রাখে আর প্রয়োজনমতো রান্না করে। তবে কাঁচা মাংসের জন্য কিচেনে রক্ত জমা থাকে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পরিষ্কার করে ফেলুন। কোনো ময়লা রান্নাঘরে জমতে দেয়া উচিত হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে রাখুন। রান্না এবং রান্নাঘর  পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত রাখার দায়িত্ব গৃহিণীর। আর পরিবারকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলেন গৃহিণী। তাই জীবাণুমুক্ততা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সবসময়।


ঈদের দিনে অতিথি আপ্যায়ন আনন্দময়। আর অতিথিদের তৃপ্তিদায়ক খাবার দিয়ে আকৃষ্ট করাও আনন্দের অংশ। খাবার পরিবেশন আর তৃপ্তিদায়কের সঙ্গে সঙ্গে অতিথির স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে। অতিথি বাইরে থেকে এসেই যেন খাবার গ্রহণে ব্যস্ত না থেকে হাত ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে ধুয়ে খেতে বসে, সেদিকে খেয়াল রাখাবেন। বিশেষ করে ছোটদের। অতিথিরাও নিজেদের সুস্থ রাখতে চান, তাই আপনি যদি হাত ধুয়ে খেতে বাসার জন্য বলেন, তবে তিনি কিছু মনে করবেন না, বরং খুশিই হবেন। আর আপনি নিজে এবং বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় অবশ্যই জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তবেই খাবারে হাত দেবেন।
কোরবানির ঈদে রাস্তাঘাটে আবর্জনা লক্ষ্য করা যায় বেশ। যদি আমরা নিজেরাসহ আশপাশের প্রতিবেশী সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি তবে আমরা নিজেরাই একটু চেষ্টাতেই শহরকে জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। বৃষ্টির এই দিনে কোরবানির আবর্জনা এখানে-সেখানে ফেলে রাখলে ময়লা জমে দুর্গন্ধ বের হয়ে পরিবেশ দূষিত করে জীবাণু ছড়ায়। অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত করে। নিজেসহ আশপাশের সবাইকে সচেতন করে জীবাণুমুক্ত থাকুন। সুস্থ-পরিচ্ছন্ন থাকুন, সুরক্ষিত পরিবার গড়ে তুলুন।

 

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago