ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল: বিনোদন হিসেবে ছবিটি অবশ্যই দেখার মতো

Victoria and Abdul
“ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল” ছবির একটি দৃশ্যে জুডি দেঞ্চ ও আলি ফজল। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমা: ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল

পরিচালক: স্তেফেন ফ্রেয়ারস

চিত্রনাট্য: লি হল

অভিনয়: জুডি দেঞ্চ, আলি ফজল

মুক্তির তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর (আন্তর্জাতিক), ৮ অক্টোবর (বাংলাদেশ)

 

এমন অনেক ছবি রয়েছে যা প্রত্যাশার জন্ম দিয়ে দর্শকদের হতাশায় ভুগায়। “ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল” সেরকমই একটি ছবি। তবে খেয়ালে রাখতে হবে যে ছবিটি “প্রায়” আসল কাহিনীর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তাই, ইতিহাস খানিকটা পরিবর্তিত হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কিন্তু, ইতিহাস সংক্রান্ত খুঁত উপেক্ষা করেও “ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল” দেখে উল্লাসিত হওয়ার চেয়ে ভ্রুকুটি করার কারণটিই বেশি। দোষটি কেবলমাত্র দুই প্রধান চরিত্রের, যারা খুব অমুগ্ধকরভাবে নিজেদের ফুটিয়ে তোলার স্থূল চেষ্টা করেছেন।

রানী ভিক্টোরিয়াকে দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী সম্রাজ্ঞী। অতুলনীয় অভিনেত্রী জুডি দেঞ্চ এর বর্ণিত ভিক্টোরিয়া একজন অলস এবং আবেগপ্রবণ বৃদ্ধা। তিনি তাঁর রাষ্ট্রের দায়িত্বের প্রতি কোনরকম ইচ্ছা প্রকাশ করেন না। তিনি ক্ষমতার বিষয়ে বেশ অজ্ঞ এবং প্রায় সময়ই তিনি তাঁর রাজকীয় অভিজাতদের অগ্রাহ্য করেন। তাঁর অদূরদর্শিতা দ্বিগুণ হয় তাঁর ভারতীয় ভৃত্য আব্দুল করিমের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্বের ফলে। আব্দুল একজন নিতান্তই সাধারণ ব্যক্তি। তাকে আগ্রা থেকে পাঠানো হয় রানীকে একটি ভারতীয় পুরস্কার দেওয়ার জন্য। আব্দুলের ব্যক্তিত্ব ভিক্টোরিয়াকে আকৃষ্ট করে। একজন বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গের আশায় ভিক্টোরিয়া আব্দুলকে তাঁর “মুন্সি” হিসেবে নিয়োগ দেন।

একজন ভারতীয় মুসলমানের প্রতি রানীর সহানুভূতি ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্যরা মেনে নিতে পারেননি। তাই, তাঁরা গোটা সিনেমাজুড়ে ভিক্টোরিয়া আর আব্দুলের বন্ধুত্ব ধ্বংস করার তীব্র চেষ্টা করতে থাকেন।

“ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল”-এর চরিত্রাঙ্কনই দর্শকদের সবচেয়ে নিরাশ করে। আব্দুল একজন এক-মাত্রিক ক্লান্তিকর চরিত্র। ভিক্টোরিয়ার প্রতি তার ভক্তি অহেতুক গড়ে উঠে যা একটি ঐতিহাসিক কাহিনীতে গ্রহণযোগ্য নয়। ভিক্টোরিয়া আর আব্দুলের বন্ধুত্বও বেশ এলোমেলোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবিতে দুজনের আকুলতার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। যদিও ভিক্টোরিয়া আব্দুলকে নিজের শিক্ষক এবং সন্তান হিসেবে দেখেন। দুজনের ভেতর হঠাৎ প্রেমের আবির্ভাব মুল কাহিনীটিকে নষ্ট করে দেয়। বোধহয় এজন্যই বলা হয় ছবিটি “প্রায়” আসল কাহিনীর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। কারণ, বাস্তবে ভিক্টোরিয়া এবং আব্দুলের সম্পর্কে প্রেমের নিশ্চিত ইঙ্গিত ছিলনা।

অবশ্যই, সিনেমাটি শুধু খারাপে ভরা তা কিন্তু নয়। স্বাজাতিকতা বা অন্য জাতির প্রতি কুসংস্কার দূর করার ওপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে “ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল”-এ। সিনেমায় রানী সবসময় চেষ্টা করেন তাঁর দরবার থেকে স্বাজাতিকতা অপসারণ করার। ভিক্টোরিয়ার উত্থানের ফলে দর্শকরা একটি ভালো উপদেশ জানতে পারবেন। কিন্তু, ছবিটি নিয়ে আরেকটু ঘাঁটলে দেখা যাবে ভিক্টোরিয়া ভারতীয়দের জন্যে আসলে তেমন কিছুই করেননি। তাঁর মৃত্যুর পরও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে স্বাজাতিকতা বোধ রয়ে যায়। তিনি তাঁর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শুধু আব্দুলকে নিয়েই আগ্রহী থাকেন।

“ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল” একটি কমেডি-নাট্য ছায়াছবি হিসেবে যথেষ্ট। ছবিটি হাল্কা দৃশ্যে একটি হাসিখুশি ভাব রাখতে পেরেছে এবং যখন দরকার যথার্থ গাম্ভীর্য এনেছে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে। বিনোদন হিসেবে ছবিটি অবশ্যই দেখার মতো, কিন্তু জ্বলন্ত ত্রুটিগুলো অনেক অতৃপ্তি রেখে দেয়। তবে, ইতিহাস ভুলে এই ঐতিহাসিক ছবিটি দেখলে দর্শকরা বেশি আনন্দ পাবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

2h ago