বিদেশেও বাণিজ্যিকভাবে চলবে দেশের চলচ্চিত্র
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে টরন্টোভিত্তিক বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিবেশক কোম্পানি ‘স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’। সেই উদ্যোগের ফলে কানাডার পাশাপাশি খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলবে বাংলা ছবি।
প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘প্রেমী ও প্রেমী’ ছবির মাধ্যমে উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে একসাথে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী শুরু হবে। ছবিটি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিপ্লেক্স ‘চেইন রিগ্যাল’, ‘সিনেমার্ক’ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ভক্স সিনেমাস’ এর সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশক প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট সজীব সপ্তক দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে জানান, “কানাডার পর আমরা যখন যুক্তরাষ্ট্রে ছবি প্রদর্শনের জন্য কাজ করছি এমনই একটা সময়ে হঠাৎ মাথায় এলো সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যেখানে অনেক বাংলাদেশি থাকেন সেখানেও কেন নয়!”
“তাই যুক্তরাষ্ট্রের পর্বটি গুছিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আমরা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। অবশেষে আরব আমিরাত, কাতার ও ওমানে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখানোর যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো চলচ্চিত্র দেখাতে হলে আরবি সাবটাইটেল প্রয়োজন আর উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় প্রয়োজন ইংরেজি সাবটাইটেল। এদিকে, ‘প্রেমী ও প্রেমী’ ছবিটির প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলীমুল্লাহ খোকন বলেন, “ছবি প্রদর্শনের বিষয়ে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো এর সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে।” তাদের ‘প্রেমী ও প্রেমী’ ছবিটির ইংরেজি এবং ফরাসি সাবটাইটেল রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ছবিটি প্রদর্শনের জন্য তারা এর আরবি সাবটাইটেল করে নিবেন।
গত মে মাসে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো কানাডায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু করে সেখানকার সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন ‘সিনেপ্লেক্স এন্টারটেইনমেন্ট’ এর মাধ্যমে।
সজীব বলেন, “আসলে গত দুই বছর থেকে আমি বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কানাডায় দেখানোর চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের ছবির তেমন কোন পরিচিতি নেই তাই আমাকে প্রথম দিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অবশেষে গত মে মাসে এটা করতে পেরেছি।”
কানাডায় ‘অস্তিত্ব’ ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে প্রথম মুক্তি পেয়ে দুই সপ্তাহ চলে। এরপর মুক্তি পায় ‘মুসাফির’, ‘শিকারী’ এবং সবশেষে ‘আয়নাবাজি’। টরন্টোতে টানা চার সপ্তাহ চলেছে ‘আয়নাবাজি’।
সজীবের মন্তব্য, “এটা এমন একটা নতুন ঘটনা যে প্রথম দিকে আমাদের দর্শকরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে বাংলাদেশের সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে বলিউডের সিনেমার মত এখানে দেখানো হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এদের মধ্যে কানাডায় বসবাস করেন মাত্র দেড় লাখ। প্রথম দিকে কানাডায় দর্শক পাওয়া কঠিন ছিল কারণ বিষয়টির সাথে আমাদের দর্শকেরা একদমই পরিচিত ছিলেন না। তবে আমরা বিভিন্ন রকমের প্রচারণার মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি করতে পেরেছি। এখন এখানকার অনেক দর্শক অপেক্ষা করেন, কবে আরেকটি নতুন সিনেমা আসবে, কবে তারা আবার দল বেঁধে হলে যাবেন।”
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সব ছবিগুলো দেখাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। সজীব আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের সঙ্গে এই দেশগুলোতেও এক সাথে একই সময়ে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার জন্য। আশা করি, একদিন সেটাও সম্ভব হবে।”
Comments