বিশপ রোডে সত্যজিৎ স্মরণ

Satyajit
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ২৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ২৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। মধ্যকলকাতার বিশপ রোডের বাড়িতে তাই সকাল থেকেই স্মরণ করা হচ্ছে দিবসটি।

সত্যজিৎ পুত্র ও চলচ্চিত্রনির্মাতা সন্দীপ রায় জানান, “কোনও আনুষ্ঠানিকতায় নয়। ঘরোয়াভাবে দিনটি আমরা পালন করি। এই দিন বাবার ভক্তরা অনেকেই আসেন বাড়িতে। তাঁর সৃষ্টি নিয়ে কথাবার্তা হয়।”

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক হিসাবে নতুন করে সত্যজিৎকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা বাহুল্যই বটে।

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে পৈত্রিক নিবাস হলেও ১৯২১ সালে প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় ও সুপ্রভা দেবীর কোল আলো করে ২ মে উত্তর কলকাতায় জন্ম নেন সত্যজিৎ।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়।

কলকাতায় ফরাসি চিত্রনির্মাতা জঁ রেনোয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার সুবাদে লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (বাইসাইকেল চোর) দেখার পর নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা চিন্তা করেন।

১৯৫৫ সালে নির্মিত “পথের পাঁচালী” প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র যা আন্তর্জাতিকমহলের মনোযোগ টানতে সক্ষম হয়।

“পথের পাঁচালী”র ছবির সঙ্গে নির্মাতা তাঁর রক্তের উৎস তৎকালীন পূর্ববাংলা (বাংলাদেশ) বলে নিজেই দাবি করে গেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘পথের পাঁচালী’র শিকড় বাংলাদেশের মাটির গভীরে গ্রথিত। তিনি বলেছিলেন, “যে জীবনের গল্প ভাষা পেয়েছে তার রয়েছে নিজস্ব ভঙ্গি ও ছন্দ। ‘পথের পাঁচালী’ এই ভেবে নির্মাণ করেছিলাম যে, নতুন পরিচালকদের প্রতি লোকের অবিশ্বাসজনিত অনীহা থেকে একটি বিখ্যাত ধ্রুপদী সাহিত্যকীর্তির ছবি আকর্ষণ অনেক বেশি হবে।”

এই ছবিটি নির্মাণ করতে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন নির্মাতা। এটি ছাড়াও পরবর্তীতে আরও ৩৭টি ছবি নির্মাণ করে বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়।

“পথের পাঁচালী” ছাড়াও “অপরাজিত” ও “অপুর সংসার” নির্মাণ করে বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি এক অসাধারণ সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ করেছেন। চলচ্চিত্র আলোচকরা ওই তিন ছবির অপু চরিত্রকে সম্মিলন করে “ত্রয়ী অপু”-র আবিষ্কার বলে থাকেন। এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বলেই স্বীকৃত।

চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও সত্যজিৎ রায় চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সংগীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্পনির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানান কাজ করেছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক।

সব মিলিয়ে এক বর্ণময় চরিত্রের নির্মাতা ছিলেন সত্যজিৎ রায়। বাংলা চলচ্চিত্রই শুধু নয়; চলচ্চিত্র ইতিহাসে এমন মহীরুহ’র প্রত্যাবর্তন আর সম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস করেন বর্তমানের অনেক নির্মাতা।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser calls for urgent reforms in social services to prioritise senior citizens, girls

Political interference led to unfair distribution of benefits in the past, he says

1h ago