ভ্রমণে স্বাস্থ্য সচেতনতা

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ভ্রমণকালে সুস্থ থাকা প্রসঙ্গে কিছু টিপস দিয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের অবস্ট্রেটিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি ডিপার্টমেন্টের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তানজিমা হক।
first aid backpack
ভ্রমণের সময় সঙ্গে ফার্স্ট এইড কিটস যেমন- ব্যান্ডেজ, তুলা, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম এবং মস্কিউটো রিপেল্যান্ট রাখা ভালো।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ভ্রমণকালে সুস্থ থাকা প্রসঙ্গে কিছু টিপস দিয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের অবস্ট্রেটিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি ডিপার্টমেন্টের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তানজিমা হক।

 

সাধারণ অসুখ এড়াতে ভ্রমণকালে করণীয়:

সাধারণ অসুখের মধ্যে সর্দি, কাশি, বমি, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, রাস্তায় খাওয়ার ফলে ট্র্যাভেলার্স ডায়রিয়া ইত্যাদি অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কিছু পূর্ব প্রস্তুতি নিলে এগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব। ভ্রমণে যাওয়ার আগে ভরপেট না খেয়ে বরং হালকা কিছু খেলে একদিকে যেমন পেটও ভরবে, তেমনি বমি হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। অ্যাসিডিটির হাত থেকে বাঁচতে হলে মসলাদার খাবার না খাওয়াই ভালো।

ভ্রমণের বাহন হিসেবে এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ি বা বাস বিশেষ সুবিধাজনক। কেননা, জানালা বন্ধ থাকার কারণে ধুলোবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যাত্রাপথে মাস্ক ব্যবহারে ধুলো-ময়লার কারণে সৃষ্ট রোগ যেমন, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য অসুখের হাত থেকে বাঁচা যায়। ধুলোবালি থেকে চোখকে নিরাপদ রাখতে সানগ্লাস এবং চুলকে রক্ষার জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করা যেতে পারে।

যাত্রাপথে একটানা মোবাইল ফোনে গেম খেলা বা চ্যাটিংয়ের ফলে ভারটাইগো বা মাথা ঘোরানো, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে একটানা এসব কাজ থেকে বিরত থাকলে মোশন সিকনেস হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য জিনিস:

কোনো ব্যক্তি হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত হলে ভ্রমণকালে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। য়ারা নিয়মিত কিছু ওষুধ সেবন করে থাকেন যেমন - হৃদরোগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, কিডনির সমস্যায় ব্যবহৃত ওষুধ ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। সাধারণভাবে কিছু ওষুধ যাত্রাপথে কাজে লাগতে পারে; যেমন- অ্যাজমার রোগীদের ইনহেলার, হাইপার অ্যাসিডিটি নিরসনে অ্যান্টি আলসারেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, ওরস্যালাইন ইত্যাদি সঙ্গে রাখা উচিত। এছাড়া ফার্স্ট এইড; যেমন- ব্যান্ডেজ, তুলা, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম এবং মস্কিউটো রিপেল্যান্ট অবশ্যই রাখতে হবে। হিল ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে মস্কিউটো রিপেল্যান্ট ক্রিমের বিশেষ দরকার পড়ে। এছাড়াও, ছোট একটি ব্যাগে ছাতা, সানস্ক্রিন, তোয়ালে, ওয়াইপস, টিস্যু পেপার সবসময় সঙ্গে রাখা যেতে পারে।

খাবার

ভ্রমণের সময় ও দূরত্বভেদে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে, তবে সব ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখা আবশ্যক। নিরাপদ পানির জন্য ক্লোরিন ট্যাবলেট ব্যাগে রাখা যায়। অল্প দূরত্বের যাত্রায় চিপস, কেক, কুকিজ ও ফলমূল নিলেই হয়। লং জার্নিতে বা হিল ট্র্যাকিংয়ে বিস্কুট, ব্রেড, বাটার, জ্যাম, কেক, চিঁড়া, মুড়ি, চিনি, ইনস্ট্যান্ট কফি, ইন্সট্যান্ট স্যুপ নুডলসের প্যাকেট ইত্যাদি সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। বাড়িতে রান্না করা খাবার না নেওয়াই ভালো, কারণ তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে ভ্রমণকালে সেদ্ধ ডিম সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।

পরিধেয়

যে কোনো ধরনের ভ্রমণে সবসময় আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে। শীতকালে মেয়েরা শাল ব্যবহার না করে বরং সোয়েটার, জ্যাকেট ও অন্যান্য শীতবস্ত্র ব্যবহার করলে একদিকে যেমন শীত নিবারণ হবে, তেমনি চলাফেরাও সহজে করা যাবে। ছেলেদেরও শীতের ধরন অনুযায়ী পোশাক পরিধান করতে হবে। এ সময় নাক, কান ও গলার সুরক্ষার জন্য কানটুপি, মাফলার ও ছোট শাল ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্রীষ্মে ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করা উচিত, যা পরলে গরম কম লাগবেেএবং শরীর ঘামলে তা সহজে শুকিয়ে যাবে। বর্ষাকালে জিন্সের ব্যবহার বেশ সুবিধাজনক। বিশেষ করে, মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে সিনথেটিক কাপড় যেমন- শিফন, জর্জেট ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত যেন তা ভিজলেও বাতাসে সহজে শুকিয়ে যায়। ভ্রমণের সময় পায়ে খোলা স্যান্ডেল না পরে বরং বন্ধ জুতো পরা উচিত, কারণ এর ব্যবহার বেশ আরামদায়ক।

গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা

গর্ভবতী মায়েদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং প্রথম ও শেষ তিন মাস ঝুঁকিহীন পরিবহনে যাত্রা করতে হবে। এক্ষেত্রে ট্রেনের যাত্রা কিছুটা নিরাপদ। প্রথম তিন মাসে অ্যাবরশনের ঝুঁকি এবং শেষ তিন মাসে প্রিম্যাচিউর লেবারের ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও, কিছু কন্ডিশনে এয়ার ট্র্যাভেল থেকে বিরত থাকতে হবে; যেমন সিকেল সেল এনিমিয়া, এব্রাপ্সিও প্লাসেন্টি ইত্যাদি। নবজাতক শিশুরা যেহেতু মায়ের বুকের দুধ পান করে থাকে, তাই তা সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে গরম-ঠাণ্ডা অনুযায়ী শিশুর শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং ফর্মুলা ফিডিং করানো হয় এমন শিশুর ক্ষেত্রে ফর্মুলা পাউডার বহনের পাত্র, ফ্লাস্কে গরম পানি ও পরিষ্কার বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। বাড়িতে তৈরি খাবার নিলে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন নষ্ট না হয়। শিশুর সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে আলাদা ব্যাগে করে কিছু কাপড়, ওয়াইপ্স, টিস্যু পেপার, মস্কিউটো রিপেল্যান্ট নিতে হবে এবং শিশুকে ধুলোবালি থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পরামর্শদাতা:

ডা. তানজিমা হক, মেডিক্যাল অফিসার, ডিপার্টমেন্ট অব অবস্ট্রেটিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

Comments

The Daily Star  | English

The story of Gaza genocide survivor in Bangladesh

In this exclusive interview with The Daily Star, Kamel provides a painful firsthand account of 170 days of carnage.

1d ago