জেমসের ছয়টি তারে চার রকমের কষ্টের গল্প

মাহফুজ আনাম জেমস। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

রকস্টার জেমসের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গান 'ছয়টি তারে লুকিয়ে আছে ছয় রকমের কষ্ট আমার'। এই গানসহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী।

গানটির সৃষ্টির বিষয়ে গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই গানটির নাম ''গিটার কাঁদতে জানে''। ১৯৯৭ সালে 'দুঃখিনী দুঃখ করো না' অ্যালবামে গানটির প্রকাশিত হয়। এতে মূলত একজন গিটারিস্টের ভেতরের অব্যক্ত বেদনার কথা ফুটে উঠেছে। গিটারের ছয়টি তারে একজন গিটারিস্ট তার দুঃখ, বেদনা ও যন্ত্রণার কথা বলার চেষ্টা করেন। আমি গানের কথায় সেই বিষয়টিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদিও গানে শুধু ৪টি কষ্টের কথা বলা হয়েছে। বাকি ২টি কষ্টের কথা গানের মধ্যে বলেননি জেমস ভাই। সম্ভবত, গান বড় হয়ে যাবে বলা হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'জেমস ভাইয়ের জন্য আমার প্রথম লেখা গান 'জেল থেকে বলছি'। যেটি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গানটি প্রথমে আমার বন্ধু শহীদ মাহমুদের জন্য করেছিলাম। বিভিন্ন আড্ডায় আমরা এটি গাইতাম। পরে শহীদের মাধ্যমেই জেমস ভাইয়ের কাছে যায়। তার মাধ্যমেই একদিন জেমস ভাইয়ের ইস্কাটনের বাসাতে গিয়েছিলাম।'

'জেমস ভাই তখনো এতোটা পরিচিতি পাননি। ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে গান নিয়ে অনেক কথা হয়। পরে গানের শিরোনাম দিয়েই অ্যালবামের শিরোনাম হয়। তার জন্য প্রায় ৩০টির মতো গান লিখেছি। জেমস ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল এই গানের জন্যে,' বলেন লতিফুল ইসলাম শিবলী।

নগর বাউল খ্যাত মাহফুজ আনাম জেমস আজ ৫৭ বছরে পা রাখলেন। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে, জেমসের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তার বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

বাবা গান করা পছন্দ করতেন না। তাই বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন জেমস। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীত জীবনের শুরু।

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যান্ড 'ফিলিংস'। জেমস ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' অ্যালবাম দিয়ে সুপারহিট হয়ে যান তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে 'জেল থেকে বলছি', ১৯৯৬ সালে 'নগর বাউল', ১৯৯৮ সালে 'লেইস ফিতা লেইস' এবং ১৯৯৯ সালে 'কালেকশন অফ ফিলিংস' অ্যালবামগুলো 'ফিলিংস' থেকে বের হয়।

'নগর বাউল' ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো- 'দুষ্টু ছেলের দল' ও 'বিজলি'। জেমসের একক অ্যালবামের মধ্যে আছে- 'অনন্যা', 'পালাবি কোথায়', 'দুঃখিনী দুঃখ করো না', 'ঠিক আছে বন্ধু', 'আমি তোমাদেরই লোক', 'জনতা এক্সপ্রেস', 'তুফান' ও 'কাল যমুনা'।

জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গানের তালিকায় আছে- বাংলাদেশ, জেল থেকে বলছি, মা, দুঃখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া।

চলচ্চিত্রের প্লে ব্যাকেও সফল জেমস। ২০১৪ সালে 'দেশা-দ্য লিডার' ও ২০১৭ সালে  'সত্ত্বা' ছবির 'তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি' গানের জন্য দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই তারকা শিল্পী। বাংলা গানের পাশাপাশি 'গ্যাংস্টার' ছবির 'ভিগি ভিগি' গানটির মাধ্যমে বলিউডে যাত্রা শুরু হয় জেমসের। এরপর 'ও লামহে' ছবিতে 'চল চলে' এবং 'লাইফ ইন এ মেট্রো' সিনেমার 'আলবিদা' ও 'রিসতে' গান তাকে বলিউডে জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
 

Comments

The Daily Star  | English
us tariff rates by country

Higher US tariffs take effect on dozens of economies

US duties rose from 10 percent to levels between 15 percent and 41 percent for a list of trading partners

2h ago