নূরের জন্য আমার ব্ল্যাঙ্ক চেক

একজন আসাদুজ্জামান নূর। কোন পরিচয়ে তাকে পরিচিত করা যায়Ñ এই নিয়েই কিছুক্ষণ থমকে থাকতে হয়। অভিনেতা নাকি আবৃত্তিকার? উপস্থাপক নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব? ছোট-বড়পর্দায় সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতায় তিনি চিরতরুণ রূপে মিশে আছেন সেকাল থেকে একাল সব মানুষের মনে। ১৯৯০ দশকে লেখক হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের কথা মনে আছে? সেই বাকের ভাই। মুখে দাড়ি সমেত যেমন অভিনয়, তেমন ব্যক্তিত্ব, তেমনি তার জীবনপদ্ধতি। শুধু জনমানুষের মনেই নয়, জীবদ্দশাতেই তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, সুজন হয়ে আছেন সহশিল্পীদের কাছে। তার অভিনীত ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমাটি যুদ্ধোত্তর সিনেমাগুলোর মধ্যে এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বহুমুখী প্রতিভাবান এই অভিনয়শিল্পী প্রসঙ্গে কথা হয় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের পরিচালক বরকত উল্লাহর সঙ্গে। মুহূর্তেই স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন তিনি। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ব্যক্ত করেন অনেক কিছু। বলেন, ‘নূর প্রসঙ্গে বলার আর কী-ইবা অবশিষ্ট রয়েছে! সবই তো বলা হয়ে গেছে।’ এ কথা বলেই পুনরায় শুরু করেন ফিরিস্তি। বুঝতে বাকি থাকে না যে, আসাদুজ্জামান নূর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিষয় সঙ্কটে পড়বেন না কোনোদিনই। ‘নূরের জন্য আমার ব্ল্যাঙ্ক চেক’Ñ বরকত উল্লাহর এ কথায় একটু হকচকিয়ে উঠলে তিনি নিজেই বুঝিয়ে দেন কথাটির তাৎপর্য। কথাটি রূপক অর্থে। কতটুকু প্রীতি থাকলে একজন মানুষ আরেকজনকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয়ার কথা বলেন? আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমনই। নূরের অভিনয়শৈলী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে নিঃসন্দেহে একজন ডেডিকেটেড আর্টিস্ট। দর্শক আকৃষ্ট করার সব গুণই তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। আমার মতে তিনি অস্কার পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন একজন অভিনয় শিল্পী।’ সৃজনশীল কর্মের বাইরে ব্যক্তি হিসেবে তাকে কেমন লাগে আপনার? ‘আসাদুজ্জামান নূরের পা থেকে মাথা পর্যন্তই সিভিলাইজেশনের ছোঁয়া। সে সদা গতিশীল একজন মানুষ। মজার বিষয় হচ্ছে সে খুব নম্র স্বভাবের, লাজুক প্রকৃতির; মানে কাউকে মুখের ওপর না করতে পারে না’, বললেন বরেণ্য নাট্য পরিচালক বরকত উল্লাহ। কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গেও কথা হয় কিছুক্ষণ। কিছুটা প্রফুল্ল হয়েই বলেন, ‘নাটকের তিনটি পর্বের পর যেকোনো কারণবশত আমি পরিচালনার কাজ এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পালন করছিলাম না; নূর তখন হুমায়ূন আহমেদকে গিয়ে বলে, বরকত উল্লাহ ছাড়া নাটক পরিচালনা করা অসম্ভব; সেদিনই বোঝা গিয়েছিল শুধু অভিনয়ের জন্যই অভিনয় করে যাওয়া নয়, এর প্রতি সে বেশ দায়িত্বশীলও বটে।’ আসাদুজ্জামান নূরের আবৃত্তিও মুগ্ধ করেছে তাকে। সেই মুগ্ধতার প্রকাশে জানান, নূরের কণ্ঠের তো তুলনাই হয় না, হেসে কথা বলে, বাচনভঙ্গিও আকর্ষক। অনেকেরই তো শ্রুতিমধুর কণ্ঠস্বর থাকে কিন্তু আবৃত্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে না। ও তা পারে। দাড়ির প্রসঙ্গে বরকত উল্লাহ রসাত্মক হয়ে ওঠেন; বলেন, ‘আমি তো মজা করে জিজ্ঞাসা করতামÑ ‘এটা কি তোমার দাড়ি নাকি নূরের দাড়ি?’ পরিশেষে কী যেন কী ভেবে আসাদুজ্জামান নূরের উদ্দেশে তিনি ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটক থেকে একটি সংলাপ শোনানÑ
‘কষ্টের কথা কী বলিব, কষ্ট কাকে বলে? কষ্ট হইল মনের আগুন, বুকের মধ্যে জ্বলে।’
অনুলিখন : শিবলী আহমেদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus opens second round of talks to strengthen national unity

'Beautiful July Charter' would be unveiled following discussions, he says

2h ago