ভালো থাকা

ঈদে সুস্থ থাকতে

ঈদের সময় কিছুটা ভালো-মন্দ খাওয়া হবে, এটাই তো স্বাদের নানা আয়োজনে উদরপূর্তিময়। কিন্তু ‘হাই প্রেশার’, ‘ডায়াবেটিস’, ‘হার্ট প্রবলেম’ এই শব্দগুলো যেন পেছন থেকে হো হো করে তাড়া করতে আসে। কী আর করা, ‘বেঁচে থাকাটাই আনন্দের’ এমন বুলি আওড়ে পছন্দের খাবারগুলোকে টেবিলে রেখেই ফিরতে হয়।

ঈদের সময় কিছুটা ভালো-মন্দ খাওয়া হবে, এটাই তো স্বাদের নানা আয়োজনে উদরপূর্তিময়। কিন্তু ‘হাই প্রেশার’, ‘ডায়াবেটিস’, ‘হার্ট প্রবলেম’ এই শব্দগুলো যেন পেছন থেকে হো হো করে তাড়া করতে আসে। কী আর করা, ‘বেঁচে থাকাটাই আনন্দের’ এমন বুলি আওড়ে পছন্দের খাবারগুলোকে টেবিলে রেখেই ফিরতে হয়।

ঈদের আনন্দে সব খাবারই আমাদের খেতে ইচ্ছা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পরিমাণে কম খেতে হবে। আর তেল-চর্বিযুক্ত খাবারের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে আগে থেকেই। ঈদের পর ছুটি থাকার সুযোগে আমরা বেশ কয়েকদিন দাওয়াতে যাই। সেখানেও প্রচুর খাওয়া হয়। মাথায় রাখতে হবে, তেল-মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই যেন দুধজাতীয় খাবার, মিষ্টি আমরা বেশি না খেয়ে ফেলি। ঈদের সময় খাদ্য তালিকায় প্রচুর তেল, চর্বি, মশলার সমন্বয়ে তৈরি খাবারের পাশাপাশি যেন কিছু হালকা ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও থাকে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। যেমন নানারকম ফলের তৈরি ফ্রুট সালাদ, কাস্টার্ড, হাড়ছাড়া মুরগির মাংস ও নানারকম সবজি রান্না। কেননা প্রচলিত রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত সহজপাচ্য খাবার থাকলে একদিকে যেমন রুচি বদলিয়ে খাওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনি পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে সেও স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে সুস্থ থাকতে পারবে।

ঈদের দিন সকাল বেলা সব বাড়িতেই মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অতিথি এলে প্রথমেই মিষ্টি দেয়া হয়। আমরা নিজেরাও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার মুখে দিয়ে ঈদের দিনটি শুরু করি। সত্যিকার অর্থে ঈদের দিনে মিষ্টি খাওয়ার এই রেওয়াজ যতদূর সম্ভব সীমিত রাখাই ভালো। যাদের ডায়াবেটিস আছে, ওজন বেশি কিংবা ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের মিষ্টি না খাওয়াই ভালো। তবে মিষ্টির বিকল্প হিসেবে দই খাওয়া যেতে পারে। দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া, কম চিনি ও কম ক্যালরি। প্রত্যেক মানুষের রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি থাকে। এই চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার চর্বি করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রক্তে বা শরীরের চর্বি কমানোর সহজ উপায় হলো গরু ও খাসির মাংস কম খাওয়া। আবার মুরগির মাংসও যাতে চামড়া ছাড়া রান্না করা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ একটি মুরগিতে যে পরিমাণ চর্বি থাকে তার অর্ধেকটাই থাকে চামড়ায়। ঈদের দিনে সালাদ খাওয়ায় কার্পণ্য করবেন না। বরং অন্য খাবার কমিয়ে দিয়ে সালাদ খেয়ে পেটটা ভরে তোলার চেষ্টা করবেন। সালাদ হিসেবে গাজর, টমেটো, শসা ও লেটুস অনন্য। গাজর ও লেটুসে রয়েছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন যা থেকে ভিটামিন এ তৈরি হয়। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অর্থাৎ ক্যান্সার নিরোধক। আর সালাদ খাবেন সব সময় টাটকা অবস্থায়।

ঈদে পোলাও বা বিরিয়ানির পরিবর্তে খিচুড়ি খাওয়া ভালো। কেননা খিচুড়ি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। তাছাড়া খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার এবং যে কোনো অনুষ্ঠানে পরিবেশনযোগ্য। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। এই ঈদে বেশি মাংস খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে কোনো মানা নেই, কিন্তু পরিমাণ বজায় রাখা খুবই জরুরি।

ঈদের দিন তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি ও আমিষজাতীয় খাবার, যেমন- মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি খাওয়া হয়। চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো টক খাবারও। এসব খাবার পরিমাণ বুঝে খাবেন। পারতপক্ষে সকালের দিকে কম খাবেন। পর্যাপ্ত পানি পান না করায় অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সব খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন। তা না হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন।

আরেকটি প্রয়োজনীয় কথা হলো, খাবারের পরিমাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সবার জন্যই জরুরি। পেট পুরে খাওয়া মানসিক তৃপ্তি দিতে পারে বটে কিন্তু শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। একবারে না খেয়ে বারে বারে কম পরিমাণে খাওয়া ভালো। সকালের নাশতা একটু বেশি হলেও দুপুরের খাবার হবে হালকা। রাতের খাবার মশলাদার না হওয়াই ভালো। আর রাতের খাবার খাওয়া উচিত তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ৭টার মধ্যে খেতে পারলে খুব ভালো হয়। রাতে খাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা পর শুতে যাওয়া উচিত, তাতে হজম ভালো হয়। ঈদ মেন্যুতে বিভিন্ন রেসিপি তৈরিতে খাদ্য উপাদান ব্যবহারে একটু সতর্ক হলে অনেক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করা যায়। যেমন- খাবার তৈরিতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করা। ঘি বা মাখনের পরিবর্তে সানফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কনডেন্সড মিল্কের পরিবর্তে লো ফ্যাট দুধ ব্যবহার করাই শ্রেয়। একটু স্বাস্থ্য চিন্তা মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করে ভিন্নধর্মী রেসিপি আপনার আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেবে।

মাংস খেয়েও থাকুন ভালো
যত কিছুই বলা হোক, কোরবানির ঈদে মাংস খাওয়া হবে না তা কি হয়? তাই মাংস খাওয়ার পরও সুস্থ থাকার জন্য দেয়া হলো বেশ কিছু টিপস।
১. চর্বি যথাসম্ভব রান্নার আগেই আলাদা করে ফেলুন।
২. মাংসের ঝোলে অপেক্ষাকৃত বেশি জমা থাকে সব মেদবহনকারী উপাদান। তাই যথাসম্ভব ঝোল পরিহার করুন খাওয়ার সময়।
৩. গরু কিংবা খাসি ভুনা খাওয়ার চেয়ে হালকা তেলে যেকোনো রেসিপি চেখে দেখতে পারেন। সালাদ কিংবা হালকা তেলে ভেজে নেয়া মাংস দিয়েই করুন উদরপূর্তি।
৪. মগজ ও কলিজা যথাসম্ভব পরিহার করুন।
৫. মাংসে বেশি চর্বি থাকলে প্রথমে গরম পানিতে মাংস সেদ্ধ করে নিন, এরপর চর্বি পানিতে গলে গেলে ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে রান্না করুন।
৬. মাংসে টেস্টিং সল্ট, সস এসব উপকরণ ক্ষতিকর দিকটা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকুন; চেষ্টা করুন যথাসম্ভব পরিহার করতে।


ত্রিকোণাসন

জ্যামিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন তিনবাহু যোগ করে ত্রিভুজ তৈরি হয়, তেমনি দেহভঙ্গিতে ত্রিভুজের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম ত্রিকোণাসন। ঊরু, হাঁটু, ও গোড়ালি সবল ও সুস্থ রাখতে, পিঠের ব্যথা দূর করতে এবং মেরুদ- নমনীয় ও সবল করতে ত্রিকোণাসন দারুণ কার্যকর। 

নিয়মাবলি
১. দুই পা ফাঁক করে সোজা হয়ে এমনভাবে দাঁড়ান যেন দুই পায়ের মাঝখানে ২-৩ ফুট পরিমাণ জায়গা থাকে। ২. এবার শরীরের ভার দুই পায়ের পাতার ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। তারপর দুই হাত শরীরে দু’পাশে সোজাভাবে প্রসারিত করুন। এই সময় হাতের আঙুলগুলো প্রসারিত থাকবে। ৩. এবার ডান পায়ের পাতা ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিন। বাঁ পাকে সোজা রেখে সামান্য ঘোরান।  ৪. এবার নিশ্বাস নিতে নিতে কোমর থেকে শরীরকে ডান পাশ বরাবর ভেঙে সোজা অনুভূমিক ভঙ্গিমায় আনুন। এবার ডান হাতকে পায়ের পাশ দিয়ে ভূমিতে রাখুন। এই হাতের তালু ভূমির ওপর ছড়িয়ে দিন এবং অপর হাতটি সোজা আকাশের দিকে তুলে দিন। উল্লেখ্য, ওপরে হাতের প্রতিটি আঙুল আকাশের দিকে প্রসারিত থাকবে। ৫. এবার আপনার মুখকে আকাশের দিকে তুলে ধরুন। ওপরের দিকে ওঠানো হাতের বুড়ো আঙুলে দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করুন। এবার স্বাভাবিক শ্বাস নিতে নিতে ৩০ সেকেন্ড স্থির থাকুন। ৬. ৩০ সেকেন্ড শেষে, মুখ নিম্নমুখী করুন, নিচের হাতের ভর থেকে শরীর মুক্ত করে, শরীরের ওপরের অংশ তুলে আনুন। এবার ধীরে ধীরে দু’পা একত্রিত করে দাঁড়ান এবং ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন।
৭. এবার পুনরায় বাম দিকে আসনটি একবার করুন। 
৮. তারপর শবাসন করুন। 

জান্নাতুল ইসলাম শিখা
ছবি:সিংগ্রহ

 

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

10h ago