কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে: এমসিসিআই

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করে ব্যাবসায়ীদের এ সংগঠনটি।

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দেওয়া সাপেক্ষে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ  বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা (এমসিসিআই)।

এ ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এমসিসিআই জানিয়েছে, অপ্রদর্শিত আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারে কর আরোপসহ জরিমানার বিধান রেখে এই ব্যবস্থা প্রচলন করলে নিয়মিত করদাতারা উৎসাহিত হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৫৩তম জাতীয় বাজেট সংসদে উত্থাপন করায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

এমসিসিআই মনে করে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি বাজার সংকুচিত হওয়া, মন্থর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, ব্যাংক ঋণের জন্য উচ্চ সুদহার, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ও রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণের সময় বাজেট প্রস্তুত করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ হাজার ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা) চেয়ে শতকরা ৪ দশমিক ৬২ ভাগ বেশি, সংশোধিত বাজেটের (৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা) ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।'

এতে আরও বলা হয়, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে বাজেটকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেওয়া আরও সুযোগ আছে।'

নিয়মিত কর প্রদানকারী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ওপর আরও বেশি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে উল্লেখ করে বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধানের জোর দাবি জানিয়েছে এমসিসিআই।

তারা বলছেন, 'আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুপারিশকৃত কর ব্যবস্থার চলমান সংস্কারের শর্তাবলীর কারণে চূড়ান্ত বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পেতে পারে। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত ০ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।'

এ অবস্থায় সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার জন্য যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, 'ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ কম। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দুই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে—প্রথমত, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে একটি "ক্রাউডিং আউট" প্রভাব তৈরি করতে পারে, যার ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে, যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা বা জনগণকে। তাই এমসিসিআই এই দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে।' 

'এছাড়াও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে বলে এমসিসিআই শঙ্কা প্রকাশ করছে,' যোগ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এমসিসিআই।

সংগঠনটি বলছে, 'করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি তথা করনেট বৃদ্ধি না করে, শুধু বর্তমান করদাতাদের করহার বৃদ্ধি করলে আশানুরূপ কর জিডিপি অনুপাত অর্জন করা সম্ভব নয়।'

'বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিসহ করনেট সম্প্রসারণ সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এবং জনবান্ধব করনীতি তথা কর ব্যবস্থার সরলীকরণের ওপর উচ্চমাত্রায় রাজস্ব আহরণ নির্ভর করে বলে এমসিসিআই মনে করে।'

এমসিসিআই মনে করে, ভ্যাটের জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করলে সামগ্রিক ভ্যাট সংগ্রহ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ ভ্যাট ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা এবং বর্তমান বাস্তবতায় ভ্যাটের নেট বৃদ্ধি করে সব যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।

আমদানি পণ্যের সম্পূরক শুল্কের হার বৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে বলে চেম্বার আশঙ্কা করছে। 

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে আছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এমসিসিআই মনে করে, মূল্যস্ফীতির এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়।

ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থকে  বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে এমসিসিআই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, 'এই ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত কর প্রদানকারী করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে। নিয়মিত কর প্রদানকারীদের জন্য এটি একটি শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকৃত অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ হারে কর আরোপসহ জরিমানার বিধান প্রবর্তন করে এই ব্যবস্থা প্রচলন করলে নিয়মিত করদাতাগণ উৎসাহিত হবে।'

Comments