রাসায়নিক পণ্যে সামান্য শুল্ক ছাড় পেতে পারেন ট্যানারি মালিকরা

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আসন্ন বাজেটে আমদানি করা সাতটি ট্যানিং রাসায়নিক পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর কথা ভাবছে সরকার। এর ফলে ট্যানারি মালিকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশীয় চামড়া শিল্পের সহায়তায় গঠিত বন্ড সুবিধার উপকার পাচ্ছেন মাত্র ২৭ ট্যানারি মালিক। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আরও প্রায় ১০০ জন এ ধরনের সুবিধা ছাড়াই কাজ করেন এবং রাসায়নিক পণ্য আমদানিতে নানা ক্যাটাগরিতে প্রচুর শুল্ক দিতে হয়।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বৈষম্য অসম পরিবেশ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানিয়েছে, বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো এ খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নষ্ট করছে।

এমন সংবাদও আছে যে অনেক ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত রাসায়নিক পণ্য আমদানি করেন এবং পরে খোলাবাজারে বিক্রি করে বন্ড সুবিধা নেন। নন-বন্ডেড মালিকরা প্রচুর শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ফলে সরকার এখন ক্রোমিয়াম সালফেট, অ্যাসিড ডাই ও ওয়াটল এক্সট্র্যাক্টসহ চামড়া ট্যানিংয়ে ব্যবহৃত সাতটি মূল রাসায়নিক পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

প্রস্তাব অনুসারে, এর মধ্যে ছয় পণ্যের শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ ও সালফেটের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হতে পারে। তবে সালফেটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করতে পারে রাজস্ব বোর্ড।

ট্যানারি মালিকরা বলছেন, এই পরিবর্তন বিদ্যমান অসামঞ্জস্য খুব একটা দূর করতে পারবে না।

গত মার্চে রাজস্ব বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিক জমা দেওয়ার সময় সংগঠনটি মোট কর আরও কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। এখন অগ্রিম কর অন্তর্ভুক্ত করার পরে কিছু রাসায়নিক পণ্যের ওপর কর ৫৮ দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছেছে।

সংগঠনটি এই সংখ্যা সাড়ে সাত শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অত্যাবশ্যকীয় রাসায়নিক পণ্যের ওপর বর্তমান ৩৫ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাস্তবসম্মত নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'রাসায়নিক পণ্য আমদানি ট্যানারি খাতের জন্য খুবই জরুরি। লবণ ও চুন ছাড়া আমরা আমদানি করা রাসায়নিক পণ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করি। ফলে কম কর নেওয়া দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।'

তার মতে, 'শুল্ক কয়েক শতাংশ কমানো হলেও খুব একটা সুবিধা পাওয়া যাবে না।'

'বড় আমদানিকারকদের হয়ত সমস্যা হবে না, কিন্তু নিয়ম মেনে চলা ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোর ওপর এটি বড় বোঝা।'

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের পরিচালক মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রোমিয়াম সালফেটের মতো পণ্যের শুল্ক আগে কমানো হয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবে তা কোনো উপকারে আসেনি।'

তার ভাষ্য, 'এখন মাত্র সাতটি রাসায়নিক পণ্য কিছুটা সুবিধা পায়। তবে অনেক প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পণ্যের শুল্ক অপরিবর্তিত আছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় চার শতাংশ-পয়েন্ট শুল্ক ছাড় খুবই কম।'

তার মতে, রাসায়নিক পণ্যের খরচ কমানো হলে ট্যানারি মালিকরা কাঁচা চামড়ার দাম বেশি দিতে পারবেন। ফলে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং বাজার আরও গতিশীল হবে।

'অর্থবহ সংস্কার না হলে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ট্যানারি কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা অন্য জায়গা থেকে চামড়া কিনবেন।'

'সরকার যদি সত্যিকার অর্থে চামড়া খাতকে সহায়তা করতে চায়, তাহলে শুল্ক কাঠামো নতুন করে সাজাতে হবে, যাতে তা বাস্তবসম্মত হয়।'

গত রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক অনুষ্ঠানে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লেদার গুডস) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'দেশে বছরে প্রায় ৩৫ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর প্রায় ৪০ শতাংশ পাওয়া যায় কোরবানির ঈদের সময়।'

তবুও মাত্র ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়। সেগুলো সাধারণত জুতা ও ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বাকিটা রপ্তানি হয়। রপ্তানির ৬৫ শতাংশ যায় চীনা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। তারা সরাসরি আসা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের তুলনায় কম দাম দেন।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কমপ্লায়েন্স সমস্যা এই শিল্পের বিকাশে মূল বাধা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এখনো অকেজো। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) অনুমোদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সনদ আমাদের নেই। এগুলো ছাড়া আমরা মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারব না।'

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

1h ago