তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ কমেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অবিক্রিত পোশাকের মজুদ থাকায় তৈরি পোশাকের অর্ডার কম পাচ্ছে বাংলাদেশ। রপ্তানির এই খাত থেকে বাংলাদেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তৈরি পোশাকের অর্ডার কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
RMG
স্টার ফাইল ছবি

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অবিক্রিত পোশাকের মজুদ থাকায় তৈরি পোশাকের অর্ডার কম পাচ্ছে বাংলাদেশ। রপ্তানির এই খাত থেকে বাংলাদেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তৈরি পোশাকের অর্ডার কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিমা অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এপ্রিল-জুনের মধ্যে অর্ডার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।

দেশের শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের অন্যতম এ কে আজাদ বলেন,  ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোর অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তার কারখানায় আগামী মৌসুমের অর্ডার ২০ শতাংশ কমেছে।

তিনি বলেন, 'গত নভেম্বর থেকে তৈরি পোশাকের অর্ডার কমতে শুরু করে। এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত আছে।'

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, পোশাকের চালানে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে এবং অর্ডারে মন্দা দেখা দেওয়ায় তা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।

আরেক প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক স্টার্লিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত এক বছর ধরে মন্দা অবস্থা চলছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রপ্তানিকারক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি দামের পোশাক সরবরাহ করছে তাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো। কিন্তু, কম দামের ও সাধারণ মানের পোশাক উৎপাদনকারীদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। 

সবমিলিয়ে গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার কমছে, বলেন তিনি। 

ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। সিএনবিসির জানায়, এটি অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের ৮ দশমিক ২ শতাংশের থেকে বেশি।

ফ্রান্স এবং স্পেনের মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক গত মাসে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি অর্ডার আসে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সুতরাং এসব অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ বাড়াবে। যা বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস আইটেমের চাহিদা কমাবে।

স্থানীয় রপ্তানিকারকরা অর্ডার কমে যাওয়ার কথা বললেও চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে এখনো পর্যন্ত গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি চালান স্থিতিশীল আছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

অর্ডারে মন্দা সত্ত্বেও পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বৃদ্ধির জন্য গত সপ্তাহে ৩টি কারণ উল্লেখ করেছিলেন পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান।

দামি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে উপার্জন বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, স্থানীয় রপ্তানিকারকদের অনেকেই ৫০ ডলার মূল্যের শীতকালীন জ্যাকেট রপ্তানি করছেন। যা পোশাক খাতের জন্য একটি বড় অর্জন এবং ৫ বছর আগেও প্রায় অকল্পনীয় ছিল।

বিজিএমইএ প্রধান বলেন, এশিয়ার দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন গন্তব্যে রপ্তানি বাড়ছে।

বিজিএমইএ'র তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ সালে উদীয়মান বাজারগুলোতে চালান ছিল ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার এবং মোট পোশাক রপ্তানিতে অবদান ছিল ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে এবং মোট রপ্তানিতে অবদান বেড়েছে হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

২০২০-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপ্রচলিত বাজারে শিপমেন্ট ছিল ৫ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানিতে অবদান ছিল ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এশিয়ার বাজারে রপ্তানি বেড়ে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা পোশাক শিল্পে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।

'এই তহবিলের বেশির ভাগই কারখানার আধুনিকায়নে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বিনিয়োগের সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে,' বলেন তিনি।

বর্তমানে গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং স্পিনিং, বয়ন ও ডাইং শিল্পসহ প্রাথমিক টেক্সটাইল খাতেও একই পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে আরও ২৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ আসতে পারে। পোশাক রপ্তানি থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য আছে।

স্টার্লিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'করোনার সময় বকেয়া পাওনা ফেরত পাওয়ায় রপ্তানি বাড়ছে। কাঁচামাল, পরিবহন খরচ ও ইউটিলিটি খরচ বাড়ার কারণে ক্রেতারা বেশি দাম দিচ্ছেন।'

রপ্তানকারকরা আশা করছেন, জুলাইয়ে আবার অর্ডার বাড়বে। কারণ আমদানিকারকরা মজুদে থাকা পোশাক বিক্রি শেষ করবেন এবং পরবর্তী শীত মৌসুমের জন্য রপ্তানি শুরু হবে।

Comments