এপ্রিলে রপ্তানি-রেমিট্যান্স কমায় বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ

export_3sep21.jpg

চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ২টি প্রধান উৎস রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। কারণ বাংলাদেশ ডলার সংকট, উচ্চ আমদানি ব্যয় ও রিজার্ভ হ্রাসসহ একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অভিবাসী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার পরিমাণ বাড়লেও প্রবাসী শ্রমিক ও বিদেশে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১৬ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে, যা ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন।

রপ্তানি কমার জন্য রপ্তানিকারকরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পশ্চিমা বাজার থেকে অর্ডার কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, অভিবাসী শ্রমিকরা টাকা পাঠাতে হুন্ডি নামে পরিচিত অবৈধ চ্যানেলকে বেছে নিচ্ছেন। কারণ ডলারের সরকারি হার খোলা বাজারের চেয়ে কম।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো কোনো দিক নয়। এছাড়া এটি কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের জন্যও খারাপ। এটি অর্থনৈতিক ঝুঁকি অব্যাহত থাকার একটি সংকেত।'

এই তথ্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। কারণ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। এতে আমদানি ব্যয় ও আমদানি পণ্যের দাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়া।

তিনি বলেন, 'আরেকটি কারণ হতে পারে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা দেশগুলোর নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে ও ঝুঁকি কমাতে বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।'

জাতীয় রপ্তানির ৮৫ শতাংশ অবদান রাখা তৈরি পোশাকের চালান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ধীর গতিতে হলেও গত কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানি কমছে।

জুলাই-এপ্রিল সময়ের মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রাপ্তি ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশ।

তবে, জুলাই-এপ্রিলে পোশাক পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়লেও রপ্তানির অন্যান্য খাত, যেমন হিমায়িত ও তাজা মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে।

ফারুক হাসান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাংক সুদের হার আর বাড়ানো না হলে ও অবিক্রীত পোশাকপণ্যের পুরনো মজুত শেষ হলে জুলাই থেকে পোশাকের বিক্রি বাড়তে পারে।

রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ মার্চের সামগ্রিক প্রবাহের তুলনায় কম ছিল। এসময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপনে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অভিবাসীরা ২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। যা চলতি অর্থবছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

জুলাই ও এপ্রিলের মধ্যে সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সিপিডির অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় হুন্ডি কার্টেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে।

করোনা মহামারির আগেও বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল, তার অর্ধেকই ছিল অবৈধ হুন্ডি কার্টেলগুলো।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার বলছেন, বিদেশে চাকরির জন্য যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে মূলত হুন্ডি দায়ী।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৮ দশমিক ৪ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ৬ দশমিক ৯৬ লাখ কর্মীর চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ সালে ৯ দশমিক ৮৮ লাখ অভিবাসী শ্রমিক অন্যান্য দেশে কাজের সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন, যা এক বছর আগে বিদেশে যাওয়া ২ দশমিক ৮০ লাখের প্রায় চারগুণ।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, এপ্রিলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবণতা একটি খারাপ সংকেত দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'রিজার্ভের চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সরকার নিট রিজার্ভের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবে না।'

আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী, সরকারকে জুনের মধ্যে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ বজায় রাখতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুজেরি বলেন, আইএমএফের হিসাব বিবেচনায় নিলে নিট রিজার্ভ এখন ২২ বিলিয়ন ডলারেরও কম।

তিনি আরও বলেন, 'রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমতে থাকলে সামষ্টিক অর্থনীতি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago