সিনথেটিক জুতার রপ্তানি বাড়ছে

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালে মে মাস পর্যন্ত গত ১১ মাসে চামড়ার নয় এমন জুতা রপ্তানি হয়েছে ৪৩৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের রপ্তানি হয়েছিল ৪০৮ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার।
সিনথেটিক জুতা
বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সিনথেটিক জুতা ও স্পোর্টস জুতার রপ্তানি বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশ থেকে সিনথেটিক জুতা ও স্পোর্টস জুতার রপ্তানি বেড়েছে। চীন থেকে রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে সরিয়ে নেওয়ায় ও মানসম্মত জুতা তৈরির সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে এই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

গত ১ বছরে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালে মে মাস পর্যন্ত গত ১১ মাসে চামড়ার নয় এমন জুতা রপ্তানি হয়েছে ৪৩৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের রপ্তানি হয়েছিল ৪০৮ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার।

গত বছর রপ্তানিতে ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪৯ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, চাহিদা কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চামড়ার জুতার রপ্তানি কমছে।

বাংলাদেশের প্রধান বাজার ইউরোপে চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে চামড়ার জুতার রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জুতার চাহিদা কমে থাকতে পারে।

২০২১ ও ২২ সালে চামড়া ও চামড়া নয় এমন জুতা রপ্তানি হয়েছিল ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চামড়ার নয় এমন জুতা থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৩৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ এইচএন্ডএম, পুমা, ডেকাথলন, ফিলা ও কাপার মতো আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে সিনথেটিক জুতা রপ্তানি করে। বাংলাদেশের জুতা মূলত স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইতালি ও জার্মানিতে রপ্তানি হয়।

এসব দেশে সাধারণত স্যান্ডেল, হালকা স্যান্ডেল, বুট, পাটের তৈরি হালকা জুতা, রাবারের জুতা ও স্নিকার রপ্তানি হয়।

এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসচেতনতা থেকে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা পাট, প্লাস্টিক, কাপড় ও পলিউরেথেন চামড়ার জুতার দিকে ঝুঁকছেন।

সুনির্ভাস ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রেতারা চীন থেকে ক্রমাগত বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছেন। তাই আমরা পণ্যের গুণগতমান বাড়িয়েছি। প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য দিচ্ছি। ফলে, রপ্তানি বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়াও, চামড়ার জুতার তুলনায় চামড়ার নয় এমন জুতার দাম তুলনামূলক কম। নন-লেদার জুতাগুলো ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক।'

তার মতে, বাংলাদেশে জুতার তৈরির পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে। পুরনো ক্রেতাদের পাশাপাশি নতুন ক্রেতা আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

সুনির্ভাস ফুটওয়্যার লিমিটেড আন্তর্জাতিক পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ সংস্থা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (লিড) এর সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা থেকে প্রতিদিন ১ লাখ ৯০ হাজার জোড়া জুতা তৈরি হয়। আগামী আগস্টের মধ্যে এর উৎপাদন পরিধি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা আছে। গত ৪ বছরের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির গড় রপ্তানি আয় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

রিয়াদ মাহমুদ জানান, তরুণ প্রজন্ম ছাড়াও সব বয়সের মানুষ জগিং ও ব্যায়ামের জন্য ঘরে-বাইরে সিনথেটিকের জুতা পড়ছেন।

তৈরিপোশাক শিল্পের মতো সিনথেটিক জুতা শিল্পের পরিধিও ব্যাপক হতে পারে বলে মনে করছেন সুনির্ভাস ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তৈরিপোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের খাত।

সুনির্ভাস ফুটওয়্যারের পণ্য ইউরোপ ও ভারতের ৭ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কাছে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে আরও একটি প্রতিষ্ঠান সুনির্ভাস ফুটওয়্যারের স্পোর্টস জুতা কেনার জন্য আলোচনা করছে।

সিনথেটিক জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাফ সুজের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদৎ উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, রপ্তানিবাজারে এই পণ্যের বিক্রি ধীরে ধীরে বাড়ছে। এক বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশে সিনথেটিক জুতা তৈরির অগ্রদূত ও টিকে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাফ সুজ প্রতিদিন ৫০ হাজার জোড়া জুতা তৈরি করছে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি দেড় কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি করছে।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা দিলীপ কাজুরি ডেইলি স্টারকে বলেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ হওয়ায় সিনথেটিক জুতার মান ও ডিজাইনে উন্নতি হয়েছে। দেশের পণ্যগুলো আন্তর্জাতিকমান বজায় রাখছে।

সিনথেটিক জুতা প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকরা সরকারের কাছে থেকে তাদের রপ্তানি আয়ের ওপর ৪ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা পান।

রফতানিমুখী কারখানা স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন না হওয়ায় বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন সুনির্ভাস ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ।

তিনি বলেন, 'আমাদের দক্ষ শ্রমিকও তৈরি করতে হবে।'

Comments