জাপানে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, সুযোগ আছে বাংলাদেশিদেরও

জাপানে দক্ষ কর্মীর চাহিদা
জাপানে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। ছবি: স্টার

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানে জনসংখ্যা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষ শ্রমিকের কাজের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এশিয়ার এই সমৃদ্ধ দেশটিতে চাকরি ও সম্মানজনক আয়ের সুযোগ নিতে পারেন বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকরাও।

জাপানের 'টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং' ও 'নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মী' স্কিমের আওতায় বাংলাদেশিদের নিয়োগের বিষয়ে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ঢাকা ও টোকিও পৃথক সমঝোতা স্মারক (এমওসি) সই করে।

টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জাপানে অধ্যাপক, গবেষক ও প্রকৌশলীদের মতো পেশাজীবী হিসেবে বাংলাদেশিদের কাজ করার সুযোগ আছে।

তবে অভিবাসী শ্রমিক নেওয়া অন্যান্য দেশের তুলনায় পূর্ব এশিয়ার ধনী দেশগুলোয় বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ১৯৯৯ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩০ কর্মী জাপানে পাঠিয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ২৯০ শ্রমিক জাপানে গেছেন। বিএমইটির তথ্য জানায়, গত বছর ৫০৮ শ্রমিক সেখানে গিয়েছেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকায় বলা হয়েছে, বিএমইটি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) পাশাপাশি প্রায় ৭০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি জাপানে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পেয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে জাপানে নির্মাণ, শিল্প, কৃষিসহ বেশ কয়েকটি খাতে চাকরির সুযোগ আছে।'

জাপানে দক্ষ কর্মীর চাহিদা
টোকিওর একটি আকর্ষণীয় স্থান। ছবি: স্টার

তার মতে, জাপানে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া উপসাগরীয় দেশগুলোর শ্রমবাজারের তুলনায় আলাদা। কারণ, প্রবাসী শ্রমিকদের অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে জাপানি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন, 'প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও ভাষা শেখানোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রতি বছর কয়েক হাজার শ্রমিককে জাপানে পাঠানো সম্ভব।'

জাপানি দৈনিক জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের এপ্রিলে যখন প্রথম 'নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মী' কর্মসূচি চালু হয়, তখন জাপান সরকার ২০১৯-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ দক্ষ কর্মী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।

গত ৯ জুন জাপানের সংবাদ সংস্থা কিয়োদো নিউজ জানায়, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ 'নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মী' ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জন্মহার কমে যাওয়ায় জাপানে শ্রমিকের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে সেখানে বিদেশি শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে প্রকল্পটি চালু করা হয়।

সম্প্রতি, জাপানের মন্ত্রিসভা ব্লু-কলার বা শ্রমজীবী দক্ষ কর্মী ভিসার আওতায় কলকারখানার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। এটি বিদেশিদের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারে।

এ ছাড়াও, ১৯৯৩ সালে টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের আওতায় জাপান সরকার টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইন্টার্ন স্কিম চালু করে।

এই কর্মসূচির আওতায় জাপান কৃষি, মৎস্য, নির্মাণ, খাদ্য উৎপাদন, টেক্সটাইল এবং মেশিন ও মেটালসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের আমন্ত্রণ জানায়।

বিওইএসএলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জাপানে একজন বাংলাদেশি টেকনিক্যাল ইন্টার্ন মাসে ১ লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারেন।

ডব্লিউএআরবিই ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মী প্রকল্পের আওতায় জাপানে পাঠানো দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার জাপানি চাকরিদাতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে।'

এতে করে জাপানি চাকরিদাতারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশি ছিলেন ২০ হাজার ৯৫৪ জন।

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

1h ago