‘কম দামে ধান বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে’

‘এ বছর ধানের উৎপাদন ভালো হলেও দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়েছেন। ধানের দাম কম থাকলে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষে তেমন আগ্রহ দেখাবেন না।’
ধানের দাম
লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটে ধান নিয়ে কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

এক সপ্তাহ আগেও লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের হাটগুলো কৃষকরা প্রতি মন ধান বিক্রি করেছিলেন এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা দরে। তা এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়।

ধানের দাম কমায় হতাশ হয়েছেন দুই জেলার প্রায় আড়াই লাখ কৃষক। ধানের বর্তমান বাজারদরে কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন না। এতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের কৃষক সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ফলন পেয়েছি ১৩০ মন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার টাকা।'

তিনি আরও বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে ৩০ মন ধান বিক্রি করেছিলাম এক হাজার ১৫০ টাকা মন দরে। এখন দাম মনপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে। দাম কমায় আমি হতাশ। বর্তমান বাজারদরে ধান বিক্রি করলে ধান চাষে লাভবান হতে পারবো না। আগামীতে ধান চাষে তেমন আগ্রহ থাকবে না।'

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম, শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কম। বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছি ১৩ মন।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটে ধানের পাইকার মোজাফফর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে প্রতি মন ধান এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা দরে কিনেছি। কারণ সরবরাহ কম ছিল। এখন হাটে ধানের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।'

'এখন ধানের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমতে পারে বলে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটের ধানের পাইকার শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধানের দাম কমায় কৃষকদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অনেক কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছরও এই সময়ে একই দামে ধান কিনেছিলাম। তবে এ বছর ধান উৎপাদনে কৃষকদের বেশি খরচ করতে হয়েছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ৮৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৭৩৩ টন। কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় এক লাখ ২০ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪২ টন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ধানের উৎপাদন ভালো হলেও দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়েছেন। ধানের দাম কম থাকলে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষে তেমন আগ্রহ দেখাবেন না।'

Comments