হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ক্লিনিকের কর রিটার্ন দেখানো বাধ্যতামূলক

পিএসআর দিতে না পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
ফটো কোলাজ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে কর রিটার্নের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

আগামী অর্থবছর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন বা বিদ্যমান লাইসেন্স নবায়নের সময় কর পরিশোধের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

পিএসআর দিতে না পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।

গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থবিল ২০২৪-এ এমন বিধানের প্রস্তাব করেন।

সরকার কর ও জিডিপি মধ্যে আনুপাতিক হার বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। কেননা, এটি দেশের অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ।

বিশ্বের সর্বনিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

এই অনুপাত বাড়ানো আইএমএফের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত। তবে এখন পর্যন্ত কর আদায় বাড়ানোর বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আশা করছে, এ ধরনের উদ্যোগ রাজস্ব আদায়ে 'বাড়তি সুবিধা' দেবে।

পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা এরকম প্রতিষ্ঠানের সেবা নেওয়া ব্যক্তিদেরকেও পিএসআর দেখাতে হবে।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, এই দুটি অব্যবহৃত খাতসহ পিএসআর দেখানো মোট খাতের সংখ্যা হবে ৪৫।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এনবিআর চায় করের পরিধি বাড়ানো; সম্ভাব্য সব করদাতাকে যুক্ত করা; কর ফাঁকি কমানো।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। ব্যয়বহুল লেনদেন করছেন এমন অনেকে এখনো করের আওতার বাইরে থেকে গেছেন।'

স্বাস্থ্যকর খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গত এক দশকে দেশে অনেক ছোট-বড় রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে চার লাখ ৩৬ হাজার হোটেল-রেস্তোরাঁয় ২০ লাখ ৭১ হাজার কর্মী আছেন।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে অনেক রেস্তোরাঁ মালিক ঠিকমতো ভ্যাট-ট্যাক্স দেন না। রাষ্ট্রকে ফাঁকি দেওয়া উচিত না।'

তবে তিনি মনে করেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে এনবিআরকে প্রকৃত করদাতা রেস্তোরাঁ মালিকদের দিকে নজর রাখতে হবে। তারা যেন হয়রানিতে না পড়েন তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে লাইসেন্স পাওয়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪৭।

এর মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক পাঁচ হাজার ২৯ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১০ হাজার ২১টি।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

'যারা ব্যবসা করবেন তাদেরকে অবশ্যই কর দিতে হবে' বলেও মত দেন তিনি।

বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বড় হাসপাতাল ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম শামীম মনে করেন, 'এই সিদ্ধান্ত ব্যবসাবান্ধব নয়।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারণ, সরকারি অফিস থেকে সব সময় সময়মতো সব কাগজ পাওয়া যায় না। সে সময় অনেক যুক্তি দেওয়া হয়।'

'লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়নের সময় পিএসআর দেখাতে পারব কি না তা বলা সম্ভব না,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সরকারকেও বুঝতে হবে আমাদের ব্যবসা কীভাবে চলে। এই নিয়ম চূড়ান্ত হলে তা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে।'

প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার জোসেফ গোমেজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু এটি সবার জন্য করা হচ্ছে, আমরা একে ইতিবাচকভাবে দেখছি। এর অংশ হিসেবে আমরা চাই সরকার প্রতিটি হোটেল থেকে কর আদায় করুক। যারা ঠিকমতো ভ্যাট-ট্যাক্স দেন না, তাদেরকে করের আওতায় আনতে হবে।'

পিএসআর দেখানো বাধ্যতামূলক করায় অন্যান্য খাত থেকে ট্যাক্স-রিটার্ন জমা দেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।

বর্তমানে দেশে এক কোটির বেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের টিআইএন আছে। এর মধ্যে ৪১ লাখ ৪৫ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআর।

Comments

The Daily Star  | English
Trend of Interest Rate Spread

Interest rate spread rises to highest level since 2003

The spread between interest rates on deposits and loans rose to 6.03 percent, the highest in two decades, indicating that banks are making money at the expense of depositors and borrowers.

13h ago