মোবাইল হ্যান্ডসেট

উৎপাদন বাড়লেও কাটছে না সংকট

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

২০২৪ সালে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ বাড়লেও বিক্রির ধীরগতি ও চোরাই সেটে বাজার সয়লাব হওয়ায় সংকটে স্থানীয় কারখানাগুলো।

গত বছর দেশে দুই কোটি ৭৩ লাখ হেন্ডসেট উত্পাদন হয়। আগের বছর তা ছিল দুই কোটি ৩৩ লাখ।

তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে। ২০২২ সালে হ্যান্ডসেট উৎপাদন সর্বকালের সর্বোচ্চ তিন কোটি ১৬ লাখ ও ২০২১ সালে দুই কোটি ৯৫ লাখ ছিল।

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি কর ও প্রচুর হেন্ডসেট উৎপাদনের কারণে কারখানার মালিকরা তেমন মুনাফা করতে পারেননি।

হ্যান্ডসেট উৎপাদনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। তখন সরকার স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে উল্লেখযোগ্য কর সুবিধা দিয়েছিল।

এই নীতির ফলে ২০১৭ সালে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন উৎপাদন শুরু করে। প্রথমে ৪০ হাজার হ্যান্ডসেট উৎপাদন করলেও ২০২২ সালে তা তিন কোটি ১৬ লাখে পৌঁছায়।

বাজার বড় হওয়ায় স্যামসাং, অপ্পো, ভিভো ও টেকনোসহ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো এখানে কারখানা করে।

তবে, ২০২৩ সালে এই খাতে তীব্র মন্দা দেখা দেয়। সে বছর আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন ২৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে যায়।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও বাড়তি করের পাশাপাশি ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই মন্দা দেখা দেয়। গত দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় ক্রেতারা খরচ কমিয়েছেন।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে হ্যান্ডসেটের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি রিজওয়ানুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামগ্রিক বিক্রিতে সাত-আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এই খাতে এখনো সংকট অনেক।'

তার মতে, হ্যান্ডসেটের স্থানীয় সংযোজনকারীরা জটিল কর কাঠামোর মুখে পড়েছেন। কারখানা পর্যায়ে সাড়ে সাত শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট, যন্ত্রাংশের ওপর আট শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক ও বিক্রির প্রতিটি পর্যায়ে অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আছে।

বিপরীতে, ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোয় কম করের কারণে ক্রেতারা উপকৃত হচ্ছেন। পণ্যগুলো আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।

পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের আধিপত্য স্থানীয় উৎপাদকদের মুনাফা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়াও, চোরাই বাজার থেকে সস্তায় কেনার পাশাপাশি চোরাচালানের মাধ্যমে আসা হেন্ডসেটগুলোর কারণে বৈধ হেন্ডসেটের বিক্রি কমেছে বলে মন্তব্য করেন রিজওয়ানুল হক।

সমিতির তথ্য বলছে, দেশের মোট হ্যান্ডসেট চাহিদার ৩৫ শতাংশ মেটানো হয় চোরাই বাজার থেকে।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ হ্যান্ডসেট উৎপাদনের আঞ্চলিক কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো হ্যান্ডসেটের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন থেকে সেসব দেশে কারখানা সরছে। আসছে বিনিয়োগও।

চিপ, ডিসপ্লে, ক্যামেরা, র‌্যাম ও ব্যাটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমদানি করায় দেশি সংযোজনকারীরা ২০ শতাংশের বেশি ভ্যালু যোগ করতে পারে না।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশকে অবশ্যই কর কমাতে হবে। স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও শিল্পে স্থিতিশীলতা আনতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Polls no later than June 2026

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has said that next national polls will be held within June 2026.

2h ago