বেনাপোল থেকে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ৪ ট্রাক ফেরত পাঠাল ভারত

বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের পর তৈরি পোশাক বহনকারী চারটি ট্রাক ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি দেশটির পেট্রাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ কারণে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরে গেছে।
এর আগে, মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুন দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট–সংক্রান্ত আদেশটি বাতিল করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে স্থলপথে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশের।
পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে যে, ভারতের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার না করলে স্থলপথে নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।
তারপরও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে গতকাল পেট্রাপোল থেকে রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের পণ্যবাহী চারটি ট্রাককে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।
ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের স্থানীয় ব্যবস্থাপক বসির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফিরে আসা ট্রাকগুলোতে তৈরি পোশাক ছিল। এসব পণ্য ভুটানে পাঠানো হচ্ছিল।'
তিনি জানান, এসব ট্রাকের পণ্য কলকাতায় খালাসের কথা ছিল। সেখান থেকে ভারতীয় ট্রাকে সড়কপথে ভুটানে যেত। এতে সময় ও খরচ কমে।
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, 'তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ২০২০ সালে বর্ধিত করা হয়। এর ফলে গত পাঁচ বছরে ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে "উল্লেখযোগ্য জট" দেখা দেয়।'
এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পণ্য আটকে থাকছে, বিলম্ব হচ্ছে এবং সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জয়সওয়াল বলেন, 'এ কারণেই ভারতের মধ্য দিয়ে বিমানবন্দর ও বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
'তবে এতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না', বলেন তিনি।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, 'পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ করার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।'
'এই চিঠির আলোকে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে', বলেন তিনি।
এ ঘটনায় বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, 'ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্য ও বন্ধুত্বে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। আমরা আশা করি ভারত সরকার তাদের আগ্রাসী সিদ্ধান্ত এড়িয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।'
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল বলেন, 'এতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।'
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) সজিব নাজির বলেন, 'ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের কারণে পেট্রাপোল কাস্টমস তৃতীয় দেশের পণ্যের জন্য কার্গো পাস দেয়নি... তবে ভারতে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে।'
Comments