পাট রপ্তানিতে মাশুল বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে আপাতত সরে এলো সরকার

ছবি: সংগৃহীত

সংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে কাঁচা পাট ও পাটপণ্যের ওপর রপ্তানি মাশুল বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারির মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। তাদের অভিযোগ, সরকার অতিরিক্ত হারে মাশুল বাড়িয়েছে।

প্রায় ৩০ বছর পর সরকার কাঁচা পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে মাশুলের হার সংশোধনের ঘোষণা দিয়ে গত ১৬ এপ্রিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল।

এতে বলা হয়, কাঁচা পাটের রপ্তানি মাশুল সংশোধন করে প্রতি বেল সাত টাকা করা হয়েছে। এটি ১৯৯৫ সালে নির্ধারিত বেলপ্রতি দুই টাকা ছিল।

এ ছাড়া, পাটপণ্য রপ্তানিতে মাশুল সংশোধন করে প্রতি ১০০ টাকা দামের পণ্যে ৫০ পয়সা করা হয়েছে। তিন দশক আগে তা ছিল ১০ পয়সা।

তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মন্ত্রণালয় বাড়তি মাশুল আরোপের ঘোষণা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

'বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবো। কারো চাপে নয়, আলোচনা-পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

তিনি মনে করেন বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও মূল্যায়নের সঙ্গে জড়িত।

'আমরা যখনই বাজার সমন্বয় বা প্রণোদনার প্রস্তাব দিই তখনই অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি মূল্যায়ন করে। যেহেতু রাজস্ব আয় কম, তাই মাঝেমধ্যে কর বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে হয়।'

তার মতে, এই ধরনের নীতি পরিবর্তন প্রায়ই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ থেকে আসে।

'তারা সবসময় আমাদের লাইসেন্সিং কাঠামো পুনর্বিবেচনা করতে বলে। বিশেষ করে, যখন সরকারি খরচ বেড়ে যায় তখনই আমরা এ ধরনের পরিবর্তনের কথা ভাবি।'

মো. আব্দুর রউফ বলেন, 'গত ৩০ বছর ধরে দেখছি একসময় করহার ছিল ১০ পয়সা। তা বেড়ে ৫০ পয়সা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে তা কম মনে হলেও যাদের বার্ষিক টার্নওভার এক হাজার কোটি টাকা, তাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব অনেক।'

'মন্ত্রণালয় প্রথমে যে পরিমাণ মাশুল বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল তা প্রস্তাব করা হয়নি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রথমে যা সুপারিশ করেছিলাম তার চেয়ে বেশি তুলে ধরা হয়েছে। সেই অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি সংশোধনের জন্য তোলা হয়।'

তার মতে, মন্ত্রণালয় প্রায়ই শিল্পখাতে কর ছাড়ের পক্ষে থাকে।

'আমরা যদি একই সঙ্গে কর বাড়ানো ও কমানোর আহ্বান জানাই তা স্ববিরোধী হয়।'

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক ও বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) প্রতিনিধিরা সরকারকে জানিয়েছেন, হঠাৎ করে রপ্তানি মাশুল বাড়ানো পাট খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

তারা জোর দিয়ে বলেন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ ও বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় এই খাত টিকে থাকার লড়াই করছে। তাই এই বাড়তি মাশুল মেনে নেওয়া যায় না।

তারা মনে করেন, আকস্মিক নীতি পরিবর্তনের ফলে রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যেতে পারে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

এসব উদ্বেগের কারণে এবং অংশীজনদের মতামত পর্যালোচনা করে সরকার পাটশিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বর্ধিত মাশুল তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আকন্দ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হঠাৎ কাঁচা পাটের ওপর রপ্তানি কর প্রায় ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি এই শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। এ ধরনের মাশুল বাড়ানো পাট ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার যদি আগামী পাট কাটা মৌসুমের শুরুতে বাড়তি মাশুল কার্যকর করে, তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।'

'মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এ ধরনের প্রস্তাব আনা হলে ব্যবসার পাশাপাশি পরিকল্পনাও ব্যাহত হয়। এ জন্য আমরা বাড়তি মাশুল তুলে নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

43m ago