যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি: ডিসেম্বর পর্যন্ত আছে পর্যাপ্ত অর্ডার

গার্মেন্টস শ্রমিক
প্রতীকী ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো থেকে পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ পেয়েছেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরবরাহকারীরা। ফলে এ বছরের শেষদিকে বড়দিন পর্যন্ত তারা ব্যস্ত থাকবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এসব পণ্যের চালান ট্রাম্পের শুল্কের আওতায় আসতে পারে।

কারখানাগুলো জুন থেকে বড়দিন মৌসুমের জন্য পুরোদমে পোশাক তৈরি শুরু করবে, যা জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত চলবে। যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্য পাঠানো শুরু হবে আগস্ট থেকে, যাতে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সেগুলো বিক্রি করা যায়। পশ্চিমা বিশ্বে শরৎ ও শীতকাল, বড়দিন এবং থ্যাঙ্কসগিভিং পোশাক বিক্রির প্রধান মৌসুম।

তবে, স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের একটি বড় অংশ এখনো ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অবশ্য ট্রাম্পের আদেশেই এই শুল্ক আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রয়েছে।

পরবর্তী গ্রীষ্ম মৌসুমের কাজের আদেশ নিয়ে সরবরাহকারী এবং ক্রেতা উভয়ই এখনো আলোচনা শুরু করেননি। ক্রেতারা ট্রাম্পের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জন্যও ১০ শতাংশের সাধারণ শুল্ক বহাল আছে। তবে চীনা পণ্য আমদানির উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য। যদিও ট্রাম্প গত বুধবার চীনা পণ্যের উপর শুল্ক কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন, তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে এটি শূন্যে নামানো হবে না।

বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীরা এখন ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে কাজের আদেশ নিয়ে আলোচনা করছেন, কারণ এসব বাজারে বাংলাদেশের জন্য শুল্ক সুবিধা বা শূন্য শুল্ক রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ অন্যান্য বাজারে, যেমন ইউরোপে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে। কারণ চীন ও ভিয়েতনামও ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব বাজারে বড় অংশ দখল করার চেষ্টা করবে।

বড়দিন পর্যন্ত ক্রয়াদেশ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব। গত বছর এই গ্রুপ ৫৬০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যার প্রায় ২৫ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে রাকিব বলেন, 'তাই, আগামী বড়দিনের চালান নিয়ে আমি চিন্তিত নই।'

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়িয়েছেন, তবে প্রস্তাবিত উচ্চ শুল্কের কারণে হয়তো তাকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

রাকিব আশাবাদী যে চীন ও ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক খুচরা বিক্রেতা তার কারখানায় এসেছিলেন। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক এবং বাংলাদেশের ওপর আগের ১৬ শতাংশ ও ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্কসহ মোট ২৬ শতাংশ শুল্ক থাকায় তিনি চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরিয়ে তার কারখানায় দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল।

রাকিব মনে করেন, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পোশাকের উৎস হিসেবে বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকবেন, কারণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক কম।

অন্যদিকে, ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে কম হলেও, ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা ততটা বেশি নয়। এছাড়াও, পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে কম শুল্কের সুবিধা পেলেও, তাদের পণ্যের বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো নয় বলে তিনি জানান।

স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, তার বার্ষিক ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তিনি বলেন, তার কিছু ক্রেতা ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্কের অর্ধেক তাকে বহন করতে বলছেন। তবে, পোশাক উৎপাদনে ৭০ শতাংশ খরচ হয় কাপড়ের জন্য, যা আমদানি করতে হয়।

তিনি আরও জানান, বড়দিনের মৌসুমে বিক্রির জন্য তার মার্কিন ক্রেতাদের কাছে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সব পণ্য পাঠাতে হবে। ট্রাম্পের শুল্কের কারণে এ মৌসুমে তিনি তার মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ পেয়েছেন।

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, তিনি বড়দিনের চালানের বিষয়ে তার মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে এখনো আলোচনা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপগঞ্জের এক পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, 'আমার মার্কিন ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলও করেননি, বাড়ানওনি এবং কোনো ছাড়ও চাননি।' তার বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়।

তবে তিনি বলেন, আগস্টের পর ক্রেতারা কী করবেন তা স্পষ্ট নয়, কারণ শুল্কের উপর ৯০ দিনের বিরতির কারণে তারাও এখন অপেক্ষা করছেন। এই বছরের জুনের মধ্যে ক্রেতারা পরবর্তী মৌসুমের জন্য কাজের আদেশ নিশ্চিত করতে পারবেন বলেও জানান এই রপ্তানিকারক।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, উচ্চ শুল্কের কারণে ক্রেতারা হয়তো কম দাম প্রস্তাব করতে পারেন, তবে রপ্তানিকারকদের দর কষাকষিতে ইতিবাচক ও শক্তিশালী থাকতে হবে।

বর্তমানে ৯০০টির বেশি স্থানীয় পোশাক কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করে এবং প্রায় ২৫টি কারখানার প্রধান মনোযোগ আমেরিকার বাজারের দিকে।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনামের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। দেশটি বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক আমদানি করে, যার ৯.৩ শতাংশ যায় বাংলাদেশ থেকে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-CEC Habibul Awal calls 2024 polls ‘farcical’

‘If I am not allowed to justify myself, then shoot me,’ Awal lashes out in court

1h ago