পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণে ৩০০ মডেল ঘর তৈরিতে দেরি, বিপাকে চাষি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের খোয়ার গ্রামে অসম্পূর্ণ পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের মডেল ঘর। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের ৩০০ মডেল ঘর তৈরিতে দেরি হওয়ায় বিপাকে পেঁয়াজ চাষি। গত বছরের নভেম্বর থেকে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী পাঁচ জেলায় স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে কম খরচে ৩০০ ঘর তৈরির কাজ শুরু করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

গত মার্চের মধ্যে ঘরগুলোর কাজ শেষ করার কথা ছিল, যাতে কৃষকরা তাদের ফসল দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করতে পারেন এবং পরে ভালো দামে সেগুলো বিক্রি করে লোকসান কমাতে পারেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ মডেল ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের পরিচালক হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ প্রকল্পের আওতায় এই ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। তবে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়ায় ঘর তৈরিতে দেরি হচ্ছে।'

রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার কৃষকরা ডেইলি স্টারকে জানান, এই মডেল ঘর না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে খুব কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

ফরিদপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে—চলতি অর্থবছরে ফরিদপুরের সালথা ও বোয়ালমারী উপজেলার ৯০ পেঁয়াজ চাষিকে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। শর্ত থাকে মালিক এক শতাংশ জমি দেবেন এবং সেই জমিতে ঘর তৈরি করে দেবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

একটি মডেল ঘরে সাড়ে তিন শ থেকে চার শ মন পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুযোগ আছে। পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকায় তৈরি করা মডেল ঘরগুলো দেশি প্রযুক্তিতে বাঁশ, কাঠ, কালার টিন, আরসিসি পিলার ও এ্যাবুনাইট শিট দিয়ে তৈরি। ঘরগুলো ২৫ দীর্ঘ ও ১৫ ফুট প্রস্ত। আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ছয়টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা রাখার পাশাপাশি ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে।

তাপ ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার আছে। এসব ঘরে ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকে।

তবে অনেক এলাকাতেই ঘর তৈরি শেষ না হওয়ায় কৃষকদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউনিয়নের কাজীপাড় গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. শাখাওয়াত হোসেন (৩৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বছর এগার থেকে ১২ শ মন পেঁয়াজ পেয়েছি। পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণে মডেল ঘরের আশায় আমি পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিকল্প ব্যবস্থা করিনি। সময় মতো ঘর না হওয়ায় ৭০০ মন পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।'

তিনি জানান, তার ঘরের ভিত্তির কাজ হয়েছে তবে ঠিকাদার আশ্বাস দিয়েছেন চলতি মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে দেবেন। 'কিন্তু কাজের যে গতি দেখছি তাতে এ মাসে কাজ শেষ হবে বলে মনে হয় না,' বলে মন্তব্য করেন শাখাওয়াত হোসেন।

সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের খোয়ার গ্রামের কৃষক জহুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রির আশায় পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু, এখন নামমাত্র দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু, নির্মাণ শেষ না হওয়ায় লাভ হয়নি।'

গত জানুয়ারিতে রাজবাড়ীতে ৫০টি ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়। এপ্রিলেই কাজ শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, ১৩ ঘরের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ এখনো চলছে।

রাজবাড়ীর পাংশার হাবাসপুর গ্রামের কৃষক মো. ফান্নুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঠ থেকে ২৫০ মন পেঁয়াজ পেয়েছি। ঘরের কাজ শেষ না হওয়ায় আট হাজার টাকা খরচ করে নিজের ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।'

একই উপজেলার বসাকুস্টিয়া গ্রামের কৃষক মো. আসাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ঘরের শুধু খুঁটিগুলোই হয়েছে। বলা হয়েছিল, এ বছরই ঘর ব্যবহার করতে পারব। তা না হওয়ায় আমাকে প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে।'

বোয়ালমারীর ঠাকুরপুর গ্রামের সুব্রত পাল ডেইলি স্টারকে জানান, তার ঘরের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকির এন্ড ব্রাদার্স।

ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সময় মতো টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। তবে কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। অনেক ঘরের কাজ শেষ।'

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সালথায় টাকা বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় সবাইকে ঘর দিতে পারিনি। এখানে এ ধরনের ঘরের চাহিদা অনেক।'

কৃষক পর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর সংরক্ষণের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এর পরিমাণ উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের অন্তত ৩০ শতাংশ। এ জন্য মেডেল ঘর করে দিচ্ছে কৃষি বিপণন বিভাগ। এর সুফলও পাচ্ছেন কৃষক।'

পরিচালক পরিচালক হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্মাণাধীন ঘরগুলো গত ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে ঘরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আশা করছি, এ মাসের মধ্যে সবগুলো ঘরের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।'

ফরিদপুরে ৬৫টি ঘর তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি সালথা ও ৩৫টি নগরকান্দায়।

সালথার গট্টি ইউনিয়নের ঝুনাখালি গ্রামের আমজেদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ঘরের কাজ শেষ হওয়ায় ১৪০ মন পেঁয়াজ রেখেছিলাম। এর মধ্যে ১৩৫ মন পেঁয়াজ ভালো ছিল।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Complete polls preparations by December: Yunus

Asks to review if those who served as polling officers in past three elections shall not be assigned the same roles again

30m ago