পাবনা-সিরাজগঞ্জে এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির হাট

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

কোরবানির ঈদের বাকি আছে আর মাত্র কয়েকদিন। তবে ঈদ এগিয়ে এলেও পাবনা ও সিরাজগঞ্জে এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশু বিক্রি। গরু নিয়ে এক হাট থেকে আরেক হাট ঘুরছেন ব্যবসায়ী ও খামারীরা দামের আশায়। বাজারে তুলনামূলক চাহিদা কম থাকায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না তারা।

পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানান, এ বছর কোরবানির পশু কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা আসছেন না। বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পশু বেচাকেনা করছেন। এতে আশানুরূপ বিক্রি ও দাম পাচ্ছেন না তারা।

তবে আশা ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদের আগে ও শেষ মুহূর্তে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিন্নাদারি গ্রামের খামারী আলতাফ হোসেন মঙ্গলবার দুটি গরু নিয়ে বেড়ার হাটে যান। কিন্তু তিনি একটিও বিক্রি করতে পারেনি।

আলতাফ বলেন, 'আমার গরুর ওজন প্রায় সাত মণ। এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে গরু বিক্রি করে দিতাম। কিন্তু দুটি হাট ঘুরে দেড় লাখের বেশি কেউ দাম বলেনি। তাই বাধ্য বাড়িতে ফেরত এনেছি। ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব।'

শাহজাদপুরের জামিত্রি গ্রামের এরশাদ বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি দুটি ছোট গরু প্রস্তুত করেছেন।

তার ভাষ্য, 'একটি সাড়ে তিন মণ ওজনের, আরেকটি দুই মণ। ছোট গরুটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রির আশা ছিল, তবে দামে পেয়েছি ৭০ হাজার। সাড়ে তিন মণের গরুটি এক লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দেব। তবে দুটি হাট ঘুরেও ৯০ হাজার টাকার বেশি দাম বলেনি কেউ।'

পাবনার সাথিয়া উপজেলার চর পাইকারিহাটের খামারি গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি চারটি বড় গরু নিয়ে হাটে নিয়ে মাত্র একটি বিক্রি করতে পেরেছেন।

গোলাম মোস্তফা বলেন, 'হাটে স্থানীয় ব্যাপারী গরু বেচাকেনা করছেন। অন্যান্য বারের মতো ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যাপ্ত ব্যবসায়ীরা আসছে না। তাই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।'

কোরবানির পশুর ব্যবসায়ী মো. রায়হান জানান, প্রতি বছর ঈদের আগে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি হাট ঘুরে অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি গরু বিক্রি করেন। কিন্তু এ বছর সপ্তাহে ১০টির বেশি গরু কেনাবেচা করতে পারছেন না।

ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানান, বাজারে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, দুই মণ থেকে পাঁচ মণের নিচে একটি গরু ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাঁচ মণের ওপর বড় সাইজের গরু ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাবনার খামারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের এক মাস আগে প্রতি বস্তা ভুষির দাম ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। কোরবানির জন্য যেসব পশু মোটাতাজা করা হয়, সে সব পশুর প্রতিদিন খাবারে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। দাই আশানুরূপ দাম না পেলে খামারীদের লোকসান গুনতে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আনয়ারুল হক বলেন, 'এ বছর জেলায় ছয় লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার পশুর। বাকি তিন লাখ ৯৫ হাজার অতিরিক্ত পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে।'

পাবনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা একেএসএম মুশারফ হোসেন বলেন, 'এ বছর পাবনায় ছয় লাখ ৪৮ হাজার কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনায় চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১২ হাজার পশুর। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার।'

এ দুই জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, এ বছর ভারতীয় পশুর আমদানি না থাকায় শেষ মুহূর্তে ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে এক কোটি ২৪ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ লাখ মোটা তাজা গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে এক কোটি চার লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। এ বছর তেমনই আশা করছে প্রাণী সম্পদ বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, এবার চাহিদার চেয়ে প্রায় ২০ লক্ষাধিক বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফলে সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Chhatra Dal rally begins at Shahbagh

BNP’s Acting Chairman Tarique Rahman joined the rally virtually as the chief guest

3h ago