নগদের জন্য নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নগদ,  মোবাইল আর্থিক সেবা, বাংলাদেশ ব্যাংক,

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডার 'নগদ'কে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার সক্ষমতা ডাক অধিদপ্তরের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, 'নগদের মালিকানা এখনো ডাক অধিদপ্তরের হাতে। তবে এটি এখন আর খুব বেশি কার্যকরী প্রতিষ্ঠান নয়। পোস্ট অফিসের পক্ষে নগদ চালানো সম্ভব নয়।'

গভর্নর মনে করেন, উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নগদের দায়িত্ব নিতে হবে। ডাক অধিদপ্তর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রাখতে পারে।

'নগদকে দ্রুত আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে,' উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'একটি বড় টেলিকম প্রতিষ্ঠান নগদের দায়িত্ব নিতে পারে। কারণ তাদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে। একটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এটি নিতে পারে।'

'নগদ'র অনিয়ম নিয়ে গভর্নর বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানটির সমাজকল্যাণের জন্য বরাদ্দ এক হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে।'

'গরিব ও অভাবী মানুষদের মধ্যে টাকা বিতরণ না করে তারা মনগড়া সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। এটা প্রমাণিত।'

আহসান এইচ মনসুরের ভাষ্য, 'নগদ' অবৈধভাবে ই-মানি তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬৩০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করেছে। এর মানে তারা প্রকৃত তহবিল গ্রহণ করেনি। কিন্তু, এখনো তাদের হাতে টাকা আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান—ই-মানি ব্যবহার করে তারা বেতন, বোনাস, যাতায়াতসহ অন্যান্য পরিচালন খরচ পরিশোধ করেছেন।

ব্যাংকিং খাত থেকে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার জিটুজি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই তহবিল জব্দ করার জন্য কাজ করছে।'

'যুক্তরাজ্যে আমরা খানিকটা সাফল্য পেয়েছি। অন্যান্য আইনি বিষয় নিয়েও কাজ করছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি এমন কিছু নয় যা সহজে বা স্বল্প সময়ে সমাধান করা যায়।'

গত জুনে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করে ব্রিটেনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের পরিবারের দুই সদস্যের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করে সংস্থাটি।

গভর্নর আরও বলেন, 'সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় গেলে যায়। পরবর্তী সরকারকে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।'

'অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা সম্পদ জব্দ করার পর্যায়ে যেতে পারি। তবে একবার এটি আইনি পর্যায়ে চলে গেলে, পুরো প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়ে যায়। সে পর্যায়ে আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের ওপর ন্যস্ত হতে পারে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থপাচার মোকাবিলায় নতুন বিভাগ খুলছে উল্লেখ করে গভর্নর জানান, এর প্রধান কাজ হবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সহায়তা করা।

'দুবাই গিয়েছিলাম, যেখানে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে দেখা করেছি। আলোচনা শেষে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বলেছেন কীভাবে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠাতে হয়। আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানোর পর তারা সেগুলো বিবেচনা করবে। যোগাযোগ রাখবে। আমার দৃষ্টিতে, তাদের প্রতিক্রিয়া বেশ ইতিবাচক ছিল।'

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, 'একই ধরনের আলোচনার জন্য শিগগিরই সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। আমরা প্রতিটি দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করছি। তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। তাদের সমর্থন পাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে এই প্রক্রিয়ার প্রতি জোরালো সমর্থন দিলেও সেখানে সরকার পরিবর্তনের পর অগ্রগতি ধীর হয়ে যায়।'

তবে ওয়াশিংটন এখন ঢাকাকে সহযোগিতা করতে নতুনভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার ও বেশ কয়েকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের একীভূতকরণের প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।'

'আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি টাকা উদ্ধার করে তাদের ফেরত দেওয়া। একটু সময় লাগতে পারে। যাদের আমানত বেশি তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।'

তিনি জনগণকে বিক্ষোভে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'এই ব্যাংকগুলোকে কীভাবে একীভূত করা যায়, মূলধন বাড়ানো যায় ও গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়—তা খতিয়ে দেখছি।'

'যা কিছু করছি, আমানতকারীদের স্বার্থেই করছি,' বলে মন্তব্য করেন গভর্নর।

Comments

The Daily Star  | English

Economist Abul Barkat held in corruption case

Prof Abul Barkat was the chairman of state-owned Janata Bank PLC

37m ago