৭ বছরে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

ছবিটি একটি ওষুধ কারখানা থেকে তোলা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি গত সাত বছরে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। নতুন বাজারে প্রবেশ, নতুন পণ্য, বাড়তি বিনিয়োগ ও দক্ষ কর্মশক্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২১৩ মিলিয়ন ডলার। তবে গত বছরের সঙ্গে তুলনা করা হলে রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের ২০৫ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছিল।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বাংলাদেশি ওষুধ উৎপাদনকারীরা নতুন ও উদীয়মান বাজারে প্রবেশ করায় রপ্তানির এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

সাত বছর আগে বাংলাদেশ প্রায় ১৪০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করত, এখন তা বেড়ে ১৬৬টি দেশে পৌঁছেছে।

তারা মনে করেন, নতুন বিনিয়োগ, নিয়মকানুনের মান নিশ্চিত ও ক্রমবর্ধমান দক্ষ কর্মশক্তির কারণে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস খাত আগামীতে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা  জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এই বৃদ্ধির মূল কারণ নতুন মলিকিউল ও ওষুধ, যেগুলো এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এই প্রবণতা আগামী বছরগুলোতে অব্যাহত থাকবে।'

তিনি আরও জানান, নতুন রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে— উজবেকিস্তান, কাজাখিস্তান ও কিরগিজস্তান। দেশগুলো সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস) সদস্য।

'এই সিআইএস দেশগুলো বাংলাদেশের ওষুধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পরিণত হচ্ছে,' তিনি যোগ করেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক সিআইএস দেশে নিয়ম প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, ফলে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও পণ্য চালু করতে পারছে।

ওই অঞ্চলে সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের জেনেরিক ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের বড় বাজার পেতে সহায়ক হচ্ছে।

'সিআইএস বাজারের পাশাপাশি আমরা আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সম্ভাবনাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'আমাদের কৌশল হলো শুধু ভৌগোলিকভাবে সম্প্রসারণ নয়, বিশেষায়িত থেরাপিউটিক সেগমেন্টেও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানো।'

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার ওয়াসিম হায়দার বলেন, গত তিন বছরে ডলার বিনিময় হার ওঠানামা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।

তবে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, শিল্পের অস্থিরতার মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা ধরে রাখতে ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে কর্মীরা দারুণ চেষ্টা করেছেন।

'কারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রধান অফিসের কর্মী পর্যন্ত সকলেই অবদান রেখেছেন, যা আমাদের ব্যবসাকে আরও চাঙা করতে সাহায্য করেছে,' বলেন তিনি।

শিল্প বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ক্রমশ পণ্যের পরিসর বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করছে।

তারা বলেন, এসব কারণেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝেও বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো বিদেশি বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (মার্কেটিং) আরেফিন আহমেদ বলেন, 'আমরা আশা করি পরবর্তীতে এই প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের মতো নয়—যেমন পোশাক। কারণ ওষুধ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হতে সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর সময় নেয়।

'নিয়ন্ত্রিত শিল্পে প্রবেশ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টা, এজন্য প্রয়োজন কার্যপরিকল্পনা, গভীর শিল্প জ্ঞান ও মজবুত কৌশল,' তিনি বলেন।

তার ভাষ্য, গত দশকে বাংলাদেশের শীর্ষ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো আধুনিক কারখানা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাব ও দক্ষ কর্মী বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করেছে। এতে মার্কিন, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার মতো নিয়মতান্ত্রিক বাজারে মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

'দশ বছর আগে আমরা যা করতে পারতাম না, আজ আমরা করতে পারি। আমাদের আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ বিজ্ঞানী ও ফার্মাসিস্ট এবং জেনেরাল ওষুধ উৎপাদনের দরকারি জ্ঞান,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

The life cycles of household brands

For many, these products are inseparable from personal memory

14h ago