ভারত

১ দিনে আদানি গ্রুপের সম্পদ কমেছে ৮৭ হাজার কোটি রুপি

আদানি গ্রুপের ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য ১০ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বা ৮৭ হাজার ৪৬৮ কোটি রুপি কমে গেছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনের পর আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে ধস নামে।
গৌতম আদানি। ছবি: রয়টার্স

আদানি গ্রুপের ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য ১০ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বা ৮৭ হাজার ৪৬৮ কোটি রুপি কমে গেছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনের পর আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে ধস নামে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবের বিষয়ে জালিয়াতি করে সম্পদের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিনের ব্যবধানে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর ৫-৭ শতাংশ পড়ে গেছে।

আদানি গ্রুপের কর্ণধার ষাট বছর বয়সী গৌতম আদানি এশিয়ার শীর্ষ ধনী। বিশ্বজুড়ে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী।

কিছুদিনের মধ্যেই আদানি গ্রুপের আরেকটি কোম্পানির নতুন শেয়ার বাজারে আসার কথা। এফপিওর মাধ্যমে আদানি এন্টারপ্রাইজ বাজার থেকে ২০ হাজার কোটি রুপি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি বাজারে অতিরিক্ত শেয়ার ছেড়ে অর্থ তোলে।

বুধবার আদানি এন্টারপ্রাইজ বলেছে, এফপিও ছাড়ার আগেই তারা ৫ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবে জালিয়াতি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভুল তথ্য দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করেছে। এভাবে আদানি গ্রুপ তার শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। গত এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ এই জালিয়াতি করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে ফোর্বস জানায়, আদানি গ্রুপ মৌরিতাস ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অফশোর কোম্পানি খুলে কর ফাঁকি দিয়েছে। এ ছাড়াও আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত প্রধান কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ দেনা আছে। এর ফলে সম্পূর্ণ গ্রুপটির আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।

আদানি গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে মোট ৮৮টি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি 'ভুল তথ্যে ভরা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'। প্রতিকারের জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় আইন অনুযায়ী হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়ার পথে এগোচ্ছে।

ভারতীয় এক্সচেঞ্জের কাছে এক বিবৃতিতে আদানি গ্রুপের আইনি প্রধান যতীন জলুন্ধওয়ালা, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনটিকে 'অনিষ্টকারী' ও তাদের গবেষণাকে 'অপর্যাপ্ত' বলে অভিহিত করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মার্কিন এবং ভারতীয় আইনের অধীনে প্রাসঙ্গিক ধারাগুলো মূল্যায়ন করছি।'

তিনি আরও বলেছেন, প্রতিবেদনটি আদানি গ্রুপের শেয়ার হোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে ভারতের স্টক মার্কেটে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও জালিয়াতি খোঁজার কাজ করে।

দিনে ১৬০০ কোটি রুপি সম্পদ বেড়েছে গৌতম আদানির

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ কোটি রুপি। ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ আম্বানির চেয়ে তার ৩ লাখ কোটি রুপির সম্পদ বেশি।

অথচ ২০২১ সালেও মুকেশ আম্বানি ২ লাখ কোটি রুপির ব্যবধানে আদানির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। গত এক বছরে আদানির সম্পদের পরিমাণ দৈনিক গড়ে ১৬০০ কোটি রুপি বেড়েছে। এক বছরেই আদানির সম্পদ দ্বিগুণ (১১৬ শতাংশ) বেড়েছে যা রুপির অংকে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কোটির সমান। আর গত ৫ বছরের হিসাব করলে এই সময়ে আদানির সম্পদ বেড়েছে ১৪ গুণের বেশি।

আদানি গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে বড় বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতে শীর্ষ অবস্থানে আছে গ্রুপটি। কয়লা ব্যবসাতেও সব প্রতিযোগীর চেয়ে এগিয়ে আছে আদানি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভোগ্য পণ্য, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আবাসন ব্যবসা আছে আদানি গ্রুপের।

২০২২ সালের মার্চে ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আদানি এন্টারপ্রাইজের ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক গৌতম আদানি। আদানি পাওয়ার ও আদানি ট্রান্সমিশনেরও ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আদানি টোটাল গ্যাসের ৩৭ শতাংশ, আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের ৬৫ শতাংশ ও আদানি গ্রিন এনার্জির ৬১ শতাংশ শেয়ারের মালিক গৌতম আদানি।

Comments

The Daily Star  | English

Faridpur bus-pickup collision: The law violations that led to 13 deaths

Thirteen people died in Faridpur this morning in a head-on collision that would not have happened if operators of the vehicles involved had followed existing laws and rules

22m ago