‘ঘাটের কাছে গল্প বলে নদীর জল’

রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে থাকা ৫ নদ-নদীর একটি হলো বালু নদ। ডেমরা এলাকায় এই নদের খোলাপাড়া ঘাটটি বয়সে নবীন। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

'আদ্যিকাল' এখনো 'শ্যাওলা' হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি এই নবীন ঘাটে। ঢাকার অদূরে ডেমরার খোলাপাড়া বাজারের কাছে বালু নদের তীরে এর অবস্থান।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে মানুষের জীবনও নদীকেন্দ্রিক। হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতেও রয়েছে নদীর প্রভাব।

রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে থাকা এমন ৫ নদ-নদীর একটি হলো বালু নদ। এই নদের খোলাপাড়া ঘাটটি বয়সে নবীন হলেও স্থানীয়দের কাছে এর গুরুত্ব কম নয়।

খোলাপাড়ার ওপারেই রূপগঞ্জের কেওঢালা গ্রাম। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বিখ্যাত ছোটগল্প 'ঘাটের কথা'য় লিখেছিলেন,—'পাষাণে ঘটনা যদি অঙ্কিত হইত তবে কতদিনকার কত কথা আমার সোপানে সোপানে পাঠ করিতে পারিতে। পুরাতন কথা যদি শুনিতে চাও, তবে আমার এই ধাপে বইস; মনোযোগ দিয়া জলকল্লোলে কান পাতিয়া থাকো, বহুদিনকার কত বিস্মৃত কথা শুনিতে পাইবে।'

খোলাপাড়া ঘাটে এমন কোনো পাথরের সোপানের পাওয়া দেখা যাবে না। কিন্তু নদের জলকল্লোলে কান পাতলে হয়তো বহুকালের বিস্মৃত কথা শুনতে পাওয়া যাবে।

কেওঢালা প্রান্তে পারের নৌকার অপেক্ষায় এক নারী। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এই ঘাটের ওপারেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কেওঢালা গ্রাম। নদের তীরঘেঁষে গ্রামটির একটি অংশ এর মধ্যেই চলে গেছে আবাসন কোম্পানির দখলে। বালু দিয়ে ভরাট করা সে জায়গাটিতে এখন মাথা দোলাচ্ছে শুভ্র কাশের দল।

কেওঢালার মানুষ এপারে পারানির নৌকা চেপে রাজধানীতে আসেন। খরচ ৫ টাকা। আবার খোলাপাড়ার বাসিন্দারাও কাজে-অকাজে নদীর ওপারে যান ছোট নৌকায় করে।

বালু নদে এখনো সারা বছর পানি থাকে। ফলে স্বচ্ছন্দে নৌযান চলাচল করতে পারে। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এর পাশাপাশি ঘাটে বেঁধে রাখা অন্য নৌকাগুলো ব্যবহৃত হয় ঘোরাঘুরির কাজে। কেউ চাইলে ঘণ্টা চুক্তিতে এসব নৌকা নিয়ে ভেসে যেতে পারেন 'বালু'র বুকের স্বচ্ছ পানিতে।

বালু নদের মূল উৎস গাজীপুরের বেলাই বিল। উজানে কাপাসিয়ার কাছে শীতলক্ষ্যার সঙ্গে সংযোগ গড়া সুতী নদী এখন প্রায় মৃত। তাই শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদের মধ্যবর্তী অববাহিকার সব পানি মূলত বেলাই বিল হয়েই বালুতে নামে।

টঙ্গী, রূপগঞ্জ ও ডেমরা থানার মধ্য দিয়ে চনপাড়ার পর শীতলক্ষ্যা নদীতে পতিত হয়েছে বালু। সবমিলিয়ে এ নদের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

ভাটিতে উত্তর-পশ্চিম থেকে তুরাগ নদ যেখানে এসে বালুতে মিশেছে, সেই জায়গাটার নাম তেরমুখ।

এখান থেকে এগিয়ে ঢাকা জেলার সীমানায় ঢুকেছে বালু। সেখানে পূর্ব পাড়ে পূর্বাচল সিটি, তারপর ঈসাপুরা বাজার।

নদের তীরঘেঁষে কেওঢালা গ্রামটির একটি অংশ এর মধ্যেই চলে গেছে আবাসন কোম্পানির দখলে। সেখানে ফুটবল খেলছে স্থানী একটি মাদরাসার কিছু শিক্ষার্থী। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

সেখান থেকে আরও ভাটিতে দক্ষিণপাড়া। তারপর বালু নদ যত ভাটিতে এগিয়েছে, অববাহিকায় ততই বেড়েছে হাউজিং কোম্পানির সাইনবোর্ড।

এভাবে টঙ্গী, রূপগঞ্জ ও ডেমরা থানার মধ্য দিয়ে চনপাড়ার পর শীতলক্ষ্যা নদীতে পতিত হয়েছে বালু। সবমিলিয়ে এ নদের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার।

নদের তীরে কেওঢালা গ্রামের এক ব্যক্তি জমিতে সার ছিটাচ্ছেন। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এই নদে এখনো সারা বছর পানি থাকে। ফলে স্বচ্ছন্দে নৌযান চলাচল করতে পারে। তবে কিছু অংশ চৈতালি ভাটার টানে সাময়িক শুকিয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে প্রবাহ কম হলেও পানির গভীরতা ৫ মিটারের নিচে নামে না।

কেওঢালার যে অংশে আবাসন কোম্পানির প্রকল্প, সেখানে মাথা দোলাচ্ছে শুভ্র কাশের দল। উপরে শরতের আকাশ। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

ডেমরার খোলাপাড়া এলাকা থেকে সম্প্রতি ছবিগুলো তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

7h ago