৬ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ১ বছরে বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ

বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি
অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ছয় বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা একে 'উদ্বেগজনক' বলে মনে করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে এই ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ছিল ৮০ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ২৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার তুলনায় ১৭১ শতাংশ বেশি।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মন্দ ঋণ ন্যাশনাল ব্যাংকের। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা ছিল ২৩ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এই ব্যাংকটি এখন ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে ভুগছে।

এক বছর আগে এর খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।

গত আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকসহ ১১ ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকটির সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। কিন্তু ব্যাপক ঋণ অনিয়ম, সুশাসনের অভাব ও পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে এটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংকটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সিকদার গ্রুপের।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মন্দ ঋণ বেড়ে হয় ১৭ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল সাত হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রতিষ্ঠানটির মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ শতাংশ।

গত আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় এই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এর হাতে ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নথিপত্রে দেখা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগোষ্ঠী ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মোট এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ঋণের ৫০ শতাংশের বেশি নিয়েছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও তিন ব্যাংকের মন্দ ঋণ গত বছর ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বছরের ব্যবধানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের মন্দ ঋণ ১১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মন্দ ঋণ তিন হাজার ৫৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা বেড়ে তিন হাজার ৮১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তিন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করায় সেগুলো এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্ত হয়।

ওইসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলছেন, চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি হয়ে পড়ছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চার হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বেড়ে ১০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে দুই-তিনটি ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় সবগুলোতেই মন্দ ঋণ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪৩ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এটি গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ছিল ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।'

তার মতে, 'বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে। সেই টাকা আর ফিরে আসবে না। বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Violence against women, children: Over 35,000 cases unresolved for over 5 years

More than nine years have passed since a case was filed over the rape of a nine-year-old schoolgirl in Dhaka’s Khilkhet area. The tribunal dealing with the case has framed charges against the lone accused and held 96 hearings but is yet to complete the trial.

11h ago