চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ১৬ হাজার কোটি টাকা

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

সরকারের রাজস্ব আদায়ে মন্দাবস্থা, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি ও আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি ২২ পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপকহারে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৭৭৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

তবে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ধীর গতিতে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি ২২ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকার বেশি।

সরকার সাধারণত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা এর সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিল না।'

তার মতে, উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি খাত ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।

বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়া কমেছে। গত বছরের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃ্দ্ধি ছিল সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২১ সালের মে মাসের পর এটি সর্বনিম্ন। তখন তা ছিল সাত দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে আগ্রহী না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে টাকা পড়ে আছে। তাই ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের টাকার চাহিদা অনেক। জরুরিভিত্তিতে টাকা দরকার।'

অধিকাংশ সরকারি প্রকল্প এখন বন্ধ। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো টাকা দিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি।'

তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বিদেশ থেকেও টাকা কম আসছে। তাই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
NCP protest at Baitul Mukarram demanding AL ban

NCP rally underway at Baitul Mukarram demanding AL trial, ban

The rally, organised by the Dhaka metropolitan unit of the NCP, began at 3:00pm

4h ago