এক্সপ্লেইনার

কোন ব্যাংক ভালো, বুঝব কীভাবে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে মানুষ তাদের কষ্টার্জিত ধন-সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে বিচিত্র সব পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কেউ কেউ সোনা-রূপার মতো মূল্যবান ধাতুতে বিনিয়োগ করে সিন্দুকে ভরে গোপন জায়গায় রাখতেন। আবার নগদ অর্থ মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এবং মৃত্যুর পর লুকায়িত সে ধন 'যখ' হয়ে আগলে রাখার রূপকথার সঙ্গেও কমবেশি পরিচিতি সবাই।

পরবর্তীতে ব্যাংকের প্রচলন হলে এই দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু, টাকা রাখার আগে ভালো ব্যাংক চেনা জরুরি; যেন প্রয়োজনের সময় সেই টাকা মুনাফাসমেত ফেরত পাওয়া যায়। অন্যথায়, ব্যাংক ডুবে গেলে খোয়া যেতে পারে আপনার সম্পদ।

ব্যাংকে টাকা রেখে ফেরত না পাওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে বিরল হলেও একেবারেই যে ঘটে না, সেটা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এই ভোগান্তি এড়াতে চাইলে চিনতে হবে ভালো ব্যাংক।

ভালো ব্যাংক চেনার বেশ কিছু নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর রয়েছে। টাকা জমা রাখার আগে জানা দরকার ব্যাংকটির প্রতি মানুষের আস্থা কেমন। এটা জানার সহজ উপায় হলো শেয়ার বাজারে ব্যাংকটি আছে কিনা। শেয়ারবাজারে সরব উপস্থিতি ও পরিচিত ব্র্যান্ড মানেই মানুষের আস্থা বেশি। ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে দেখেও ভালো ব্যাংক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেসব ব্যাংকের সঙ্গে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেন করে সেগুলো ভালো ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্যাংক হতে হবে গ্রাহকবান্ধব

যে ব্যাংকে টাকা রাখবেন সেটি কতটা গ্রাহকবান্ধব সেটা জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম কাভারেজ—এসব সুবিধা থাকলে ব্যাংকটি আধুনিক ও গ্রাহকবান্ধব। ভালো ব্যাংক চেনার আরেকটি মোক্ষম উপায় হলো, ব্যাংকটি সম্পর্কে গ্রাহকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানা। কম অভিযোগ ও গ্রাহক সন্তুষ্টির অর্থ ব্যাংকের সেবার মান ভালো।

উপার্জিত অর্থ নতুন সম্পদ সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হলে তাকে বিনিয়োগ বলা হয়। ব্যাংকে টাকা রাখলেও সেটা বিনিয়োগ হয়। কারণ, সেই টাকা অন্য মানুষকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। যাকে ঋণ দেওয়া হয় তার কাছ থেকে সুদ হিসেবে বাড়তি অর্থ আদায় করে ব্যাংক। যারা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তারা এর একটি অংশ মুনাফা হিসেবে পান।

বেশি মুনাফার লোভ ভালো নয়

কিন্তু তারল্য সংকটে থাকা অনেক ব্যাংক গ্রাহক আকৃষ্ট করতে উচ্চ হারে মুনাফার প্রলোভন দেখায়। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার পরও যদি কোনো ব্যাংক উচ্চ হারে মুনাফা দিতে চায়, তাহলে সেই লোভে পা না দেওয়াই ভালো। কারণ এ ধরনের ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রেই চাওয়ামাত্র তার গ্রাহককে অর্থ ফেরত দিতে পারে না।

খেলাপি ঋণের ব্যাংক এড়িয়ে চলুন

ভালো ব্যাংক চিনতে হলে খারাপ ব্যাংক কোনটি সে সম্পর্কেও ধারণা থাকা জরুরি। খারাপ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ মাত্রায় মন্দ ঋণ বা নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) বোঝা। ব্যাংকের ঋণের মধ্যে কত অংশ খেলাপি হয়ে গেছে তা এই অনুপাত দিয়ে বোঝা যায়। ভালো ব্যাংকের এনপিএল অনুপাত ৫ শতাংশের নিচে থাকে, বিশেষ করে বেসরকারি বা বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে।

ব্যাংকের মন্দ ঋণ সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সংবাদপত্রের রিপোর্ট। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে খবরের কাগজে হরেদরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাই অ্যাকাউন্ট খোলার আগে ওই ব্যাংক সম্পর্কে সর্বশেষ যেসব খবর এসেছে সেগুলো দেখে নেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে গুগল সার্চ কাজে লাগতে পারে।

ভালো ব্যাংকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো অ্যাডভান্স-টু-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে থাকা। এডিআর হলো প্রতি একশ টাকা আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই অনুপাত সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ ও ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারবে। ভালো ব্যাংকগুলো সাধারণত এই সীমার মধ্যে থেকেই ঋণ দেয়। এআর খুব বেশি হলে ওই ব্যাংকে টাকা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

ক্রেডিট রেটিং ও ক্যামেলস রেটিং দেখে একসময় ভালো ব্যাংক চেনা যেত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব সূচক গুরুত্ব হারিয়েছে। কারণ, যেসব প্রতিষ্ঠান এই রেটিং করে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ফলে খারাপ ও দুর্বল ব্যাংকগুলোও ভালো রেটিং পাচ্ছে।

সুতরাং, নিজের কষ্টার্জিত টাকা সুরক্ষিত রাখতে একটু খোঁজখবর নিয়েই ব্যাংক বাছাই করা যুক্তিসঙ্গত।

 

Comments

The Daily Star  | English
Pharmaceutical raw material import dependency Bangladesh

Heavy import reliance leaves pharma industry vulnerable

Despite success, Bangladesh's pharma industry hinges on imported raw materials

13h ago