‘দেশের হালকা-প্রকৌশল খাতের বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হালকা-প্রকৌশল খাত থেকে বর্তমানে বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জিডিপিতে যার অবদান ৩ শতাংশ।
ডিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, জিডিপি, হালকা-প্রকৌশল খাত, সামীর সাত্তার, ওয়ালটন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স, মেঘনা গ্রুপ,
ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আমদানি বিকল্প শিল্প: প্রেক্ষিত হালকা-প্রকৌশল খাত’ শীর্ষক সেমিনার। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হালকা-প্রকৌশল খাত থেকে বর্তমানে বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জিডিপিতে যার অবদান ৩ শতাংশ।

আজ বৃহস্পতিবার ডিসিসিআই আয়োজিত 'বাংলাদেশের আমদানি বিকল্প শিল্প: প্রেক্ষিত হালকা-প্রকৌশল খাত' শীর্ষক সেমিনারে ওই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের হালকা-প্রকৌশল খাত থেকে বর্তমানে বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জিডিপিতে যার অবদান ৩ শতাংশ এবং প্রতিবছর এ খাতটি ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ আমরা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, '২০২১-২২ অর্থবছরে হালকা প্রকৌশল খাত থেকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এ খাতের বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়নে নীতি সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন।'

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, 'হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশে সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হলে আমাদের স্থানীয় খাদ্য, চামড়া ও পাদুকা, ইলেকট্রনিক্স, এগ্রো-প্রসেসিং এবং ওষুধ শিল্পের বেকওয়ার্ক লিংকেজ খাত হিসেবে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হবে, পাশাপাশি এ খাত থেকে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।'

তিনি বলেন, 'এ খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার 'শিল্পনীতি ২০২২'-এ খাতটিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে এখন প্রয়োজন আর্থিক ও নীতি সহায়তা।'

'২০২৫ সালে আমাদের জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অবদান ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ উন্নীত করতে এ খাতে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য, যা শিল্পের স্থানীয় সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে,' যোগ করেন তিনি।

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, 'এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতে বর্তমানে বিদ্যমান শুল্ক নীতিমালা খাতটির বিকাশে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নয়, এ অবস্থায় হালকা প্রকৌশল খাতের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়ক শুল্ক কাঠামো নিশ্চিত করা দরকার।'

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'হালকা প্রকৌশল খাতে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, চীন ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশেও সঠিক পথেই আছে, প্রয়োজন যথাযথ নীতি সহায়তা এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'সরকারি পর্যায়ে নীতি সহায়তা নিয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে শিল্পখাতের বিকাশ স্তিমিত হয়ে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মৌলিক মেশিনারিজ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ধোলাইখাল, জিঞ্জিরাসহ তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের উৎসাহ বৃদ্ধিতে আরও নজর দিতে হবে।'

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'খাতটি এখনো আমদানি নির্ভর এবং আমাদের শিল্পখাতের বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য এ খাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এখানে মনোনিবেশ বাড়াতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা কার্যক্রমের সংস্কার ও যুগোপযোগী কারার কোনো বিকল্প নেই। অটোমোবাইল খাতের রিসার্চ ইন্সটিটিউট স্থাপনে ইতোমধ্যে জাপানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সহায়তা পাওয়া যাবে।'

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরশাদ হক বলেন, 'এ শিল্পের বিকাশে অন্তত ১০ বছর মেয়াদী নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় নিজেদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। আমেরিকাভিত্তিক হোয়ার্লপুল ইতোমধ্যে যৌথভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রচুর মানব সম্পদ আছে, তবে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এ খাতের প্রযুক্তিগত গবেষণার জন্য ল্যাব স্থাপনে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।

ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন বলেন, '২০৩০ সালে আমাদের স্থানীয় হালকা-প্রকৌশল শিল্পটি ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিল্পে পরিণত হবে। এ খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাখাতের সংস্কার, নীতি সহায়তা ও নীতির ধারাবাহিকতা আবশ্যক, যা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।'

মেঘনা গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ তানভীর বলেন, 'ইউরোপীয় বাজারে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন বাইসাইকেলের চাহিদা আছে, যেখানে আমাদের উৎপাদিত বাইসাইকেল রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform six key sectors: Yunus

The commissions are expected to start their functions by October and they are expected to complete their work within the next three months, said Chief Adviser Prof Muhammad Yunus in his televised address to the nation

29m ago