শিল্প কারখানায় এলপিজি ব্যবহারের কথা ভাবছে বাংলাদেশ

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস, এলপিজি, এলএনজি, কারখানায় এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার,
ছবিটি কয়েক সপ্তাহ আগে মোংলা বন্দর থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান

দেশের শিল্প খাতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে নীতিমালা প্রণয়নে একটি প্যানেল গঠন করেছে সরকার।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক শামীম খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তাকে প্রধান করে গঠিত ১৪ সদস্যের কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ৬ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

গত ৭ নভেম্বর 'বিকল্প জ্বালানি হিসেবে শিল্পে এলপিজি ব্যবহারের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ' শীর্ষক এক সভায় এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।

বৈঠকে কিছু সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয় এবং অন্যান্য জ্বালানির সঙ্গে এলপিজি ব্যবহারের প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক দিকগুলোর তুলনা করা হয়।

তিনি বলেন, 'খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের আগে আমরা ব্যবহারকারী, সরবরাহকারীসহ সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করব।'

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বর্তমানে মিলগুলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) পরিচালিত হয়, যার প্রাথমিক উপাদান মিথেন।

অন্যদিকে এলপিজির প্রাথমিক উপাদান হলো প্রোপেন, তাই মিল চালানোর জন্য এটি ব্যবহার করা যায় না।

মিথেন থেকে প্রোপেন ব্যবহারের বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে তারা সেসব উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও কেইলক নিউএজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশে অনেক কারখানা ডিজেল জেনারেটরের মতো প্রচলিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, তবে ডিজেলের তুলনায় এলপিজি পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর ব্যবহার বায়ু দূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সহায়তা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এলপিজি রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর পরিচালন ব্যয় কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে এই পরিবর্তনের জন্য কারখানা মালিকদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি মন্তব্য করেন, সরকারের উচিত হবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে এলপিজিতে স্থানান্তরিত কারখানাগুলোকে নগদ প্রণোদনা, ট্যাক্স বিরতি ও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।

'এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এলপিজি প্রথাগত জ্বালানির তুলনায় অনেক সুবিধা দেয়। কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে এখনো বিবেচনা করতে হবে, যেমন- নিরাপদ হ্যান্ডলিং ও মজুত করা নিয়ে,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, এলপিজি বিতরণ ও মজুতের জন্য সরবরাহ এবং অবকাঠামো পর্যাপ্তভাবে বিকশিত করা দরকার, যেন শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জাকারিয়া জালাল বলেন, শিল্প কারখানাগুলোতে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং, কারণ এলএনজির সঙ্গে দামের পার্থক্য আছে।

বাংলাদেশের এলপি গ্যাসের বাজারে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড শীর্ষ প্রতিষ্ঠান, ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের এলপিজি বাজারের ২৪ শতাংশ তাদের।

জাকারিয়া জালাল বলেন, বর্তমানে এলপিজির দাম কেজিপ্রতি ১০৩ টাকা এবং এলএনজির দাম ৪০ টাকা কেজি।

তিনি বলেন, 'এলএনজি থেকে এলপিজি ব্যবহারে শিল্পপতিরা আগ্রহী হবেন না।'

গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ মোট ৩০টি বহুজাতিক ও দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এলপিজি বোতলজাত ও বাজারজাত করছে।

বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন এলপিজির চাহিদা আছে, যা ক্রমাগত বাড়ছে। একবার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে গেলে এই চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

দেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের গৃহস্থালি জ্বালানির বিপুল চাহিদা মেটাতে নিরবচ্ছিন্ন এলপিজি সরবরাহ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন দিন দিন কমায় এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় বিকল্প জ্বালানি উৎস ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৈঠকে আরও উল্লেখ করা হয়, গৃহস্থালিতে ব্যবহার ছাড়াও শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে এলপিজি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া দরকার।

সভায় এলপিজি ব্যবহারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ করে তা মোকাবেলায় সরকারি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago