রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে সিমেন্টশিল্প

সিমেন্টের বস্তা বহন করছেন শ্রমিকরা। ফাইল ছবি: স্টার
সিমেন্টের বস্তা বহন করছেন শ্রমিকরা। ফাইল ছবি: স্টার

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে দেশে সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সরকারি প্রকল্প বন্ধ থাকায় গত বছর দেশে সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।'

সংশ্লিষ্টরা একই উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, এসব কারণে নির্মাণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আমিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বড় প্রকল্পগুলো বন্ধ থাকায় সিমেন্টশিল্পে মন্দা বেড়েছে।'

প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, 'রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সিমেন্টশিল্প আগেও সংকট মোকাবিলা করেছে। আশা করছি, আগামীতে এই শিল্পের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা আছে।'

তার মতে, একদিকে সিমেন্টের চাহিদা কমছে। অন্যদিকে, এর উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের হেড অব বিজনেস মো. মশিউর রহমান ডালিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত দেশের সিমেন্টের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ে ও বাকি ৪০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোয় ব্যবহার করা হয়।'

তবে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন তা হতাশাজনক। এখন ব্যক্তি পর্যায়ে সিমেন্টের ব্যবহার ৯০ শতাংশেরও বেশি।

তিনি মনে করেন—মূলত সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প অনুমোদনে দেরি হওয়ায় সিমেন্টশিল্পের এই করুণ অবস্থা।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রকল্পগুলো প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মাণ প্রকল্পগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে—দেশের ৪২ সিমেন্ট কারখানায় মোট ৮৪ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়।

মশিউর রহমান ডালিম জানান, প্রতি মাসে সিমেন্ট বিক্রি ৩৪ লাখ টনে নেমে এসেছে। ফলে সক্ষমতার মাত্র ৪৫ শতাংশ নিয়ে এ শিল্প চালু আছে।

'সিমেন্ট বিক্রির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সাধারণত নয় থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকে। গত বছর প্রায় এক দশমিক দুই শতাংশ বিক্রি কমেছে।'

'বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখন কঠিন পরিস্থিতিতে আছি। প্রায় ১০ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদনে নিয়োজিত মানুষ এখন মাত্র এক লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন করছেন। মন্দা সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাই করিনি।'

কাঁচামাল আমদানি শুল্কের অসামঞ্জস্যতা এই শিল্পের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মশিউর রহমান ডালিম আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকারের দাম টনপ্রতি ৪৪ ডলার হলেও সরকার প্রতি টন ৬২ ডলারের ভিত্তিতে আমদানি শুল্ক হিসাব করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'এই বৈষম্যের ফলে টনপ্রতি অতিরিক্ত খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। চুনাপাথরের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় খরচ আরও বেড়েছে।'

সাধারণত শীতে সিমেন্ট বিক্রি বেড়ে গেলেও চলতি শীতে তা হয়নি।

সিমেন্টের চাহিদা কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক নির্মাণ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্রেশ সিমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশেদ আলম সিমেন্টের চাহিদা কমে যাওয়ায় এই খাতে মারাত্মক সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, 'ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে উৎপাদনকারীরা সিমেন্টের দাম কমপক্ষে ১৫ শতাংশ কমাতে বাধ্য হয়েছেন।'

তিনি মনে করেন, উৎপাদকরা সিমেন্ট বিক্রিতে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করায় এর দাম কমেছে।

২০১০ সাল থেকে গড়ে আট শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২২ সাল থেকে তা কমছে।

এই খাতের চলমান অনিশ্চয়তার জন্য নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন তিনি। এ কারণে ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তার মতে, 'বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ টাকা খরচ বা নতুন প্রকল্প শুরু করতে দ্বিধাগ্রস্ত আছেন।'

নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে ও বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন।

'যখন উন্নয়ন প্রকল্প চালু হবে এবং মানুষ ভবন নির্মাণে আস্থা ফিরে পাবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে। ততদিন পর্যন্ত সিমেন্ট ও নির্মাণ খাত স্থবির থাকার আশঙ্কা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

6h ago