দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ কখনোই ব্যর্থ হয়নি: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ও এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া।

দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ৫১ বছরে কখনোই ব্যর্থ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদর দপ্তরে বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৈঠকের শুরুতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এডিবি বাংলাদেশের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করায় অর্থমন্ত্রী আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে মোট বকেয়া ১১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্ষমতার সঙ্গে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রায় কখনোই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ, মাত্র ৩৪ শতাংশ।'

অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ এর সংকটে এডিবি দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের সক্রিয় ও গতিশীল নেতৃত্বের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, 'এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকট পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত ভ্যাকসিন ও ব্যয় সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, বাংলাদেশ-এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫), বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে। যা আগামী ৫ বছরে আমাদের জন্য ১২-১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার যোগান থাকবে বলে আশা করা যায়। আমাদের উন্নয়নের মাইলফলক অর্জনে এডিবির ক্রমাগত সমর্থন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

বাংলাদেশর সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার ও আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) প্রয়োজন। এ বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এডিবির বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশও এডিবি সদর দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।'

'আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি যে এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য গতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা মোকাবিলায় মিশ্র অর্থায়নের পরিবর্তে নমনীয় ঋণ সহায়তা হবে বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এছাড়াও এডিবি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আইসিটি ভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ, স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানসম্পন্ন অবকাঠামোর কৃষি প্রবর্তনে তার উদার সহায়তা প্রসারিত করতে পারে', বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ও এডিবির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে গুরুত্বারোপ করে আহম মুস্তফা কামাল বলেন, 'আগামী বছর বাংলাদেশ ও এডিবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৩ সাল আমাদের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী হবে।' ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৬৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে এডিবি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফর এবং ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান অর্থমন্ত্রী। বিশাল পোর্টফোলিও ও এডিবির সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ থেকে এডিবির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশেষ করে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করার কথা বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকর প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, 'নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক।'

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগ এবং টিকা কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি এডিবির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে, সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সবসময় এডিবি থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

9h ago