দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ‘আশানুরূপ’ বিদেশি বিনিয়োগ নেই

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। ছবিটি গত সেপ্টেম্বরে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী রাজীব রায়হান।

২০১৫ সালে যখন সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয়, তখন সরকারের লক্ষ্য ছিল বিদেশি ও স্থানীয় উভয় বিনিয়োগকেই আকৃষ্ট করা। যার মাধ্যমে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে, ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আগামী ১৫ বছরে সেখান থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি করা যাবে।

তাই সেই ইকোনমিক জোনে মূলধন লাভ, লভ্যাংশ, রয়্যালটি ও প্রযুক্তিগত ফির ওপর ১০ বছরের জন্য ১০০ শতাংশ আয়কর ছাড় এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস ব্যবহারে মূল্য-সংযোজন করের ওপর ৮০ শতাংশ ছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এ ছাড়া, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ২০ শতাংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং এই অঞ্চলে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা তাদের নিট বেতনের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করতে পারবেন।

৭ বছর পর এসে সরকার কেবল ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করেছে, আর উদ্যোক্তারা কয়েক ডজন।

সে অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশ-বিদেশ থেকে অটোমোবাইল, কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হাসপাতাল, প্লাস্টিক, ভোজ্যতেল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ সব মিলিয়ে ২২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে।

বেজার তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। এ ছাড়া, এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের অগ্রগতি বেশ হতাশাজনক। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এটি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।'

'আমরা গত ১ দশকে বেজার বিশাল কর্মকাণ্ড দেখেছি। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিনিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি', বলেন তিনি।

বেজা সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য তারা জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও নরওয়ে থেকে বিনিয়োগ পেতে সক্ষম হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ৬ মিলিয়ন ডলার, এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ৩৪ মিলিয়ন ডলার ও যৌথ উদ্যোগে নিপ্পন অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীরা মিলে বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৯৬৭ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'যদিও এফডিআইয়ের পরিমাণ মোট বিনিয়োগ প্রস্তাবের দিক থেকে কম, তবে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হয়ে গেলে এটি আরও বাড়বে।'

অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (সিঙ্গাপুর) ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। একইসঙ্গে প্যাসিফিক গ্যাস বাংলাদেশ লিমিটেড (থাইল্যান্ড) ১০০ মিলিয়ন ডলার ও ইন্টার-এশিয়া গ্রুপ পিটিই লিমিটেড (সিঙ্গাপুর) ৯০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

এ ছাড়া, ইউরেশিয়া ফুড প্রসেসিং (বিডি) লিমিটেড (ইউকে) ৩০ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউকে) ২৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, এইচএ টেক লিমিটেড (অস্ট্রেলিয়া) ২১ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার ও জিন্দে ইলাস্টিক (বিডি) কো লিমিটেড (চীন) ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

আর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৬৫০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করবে জাপানি ট্রেডিং জায়ান্ট সুমিতোমো করপোরেশন, যা প্রায় ২০০টি কোম্পানিকে স্থান দিতে ও ২ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

গত ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪টি শিল্প ইউনিটে বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নকে উৎসাহিত করতে আরও ২৯টি সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপনের ঘোষণা দেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'বেজা প্রাথমিকভাবে তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্যে এস্টেটের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোকে জমি বরাদ্দ দেয়। ফলে সেখানে বিপুল সংখ্যায় বিদেশি লগ্নিকারীদের ঠাঁই হয়নি। সেই কারণেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।'

'অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্দেশ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি বরাদ্দের আগে আগে নির্ধারিত স্থানের উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তখনই আগ্রহী হয়, যখন জমি ও ইউটিলিটি পরিষেবাগুলো প্রস্তুত করা হয়', বলেন তিনি।

মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, 'বেজা তাদের মডেল পরিবর্তন করেছে এবং এখন তারা বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্নত জমি বরাদ্দ দেবে। এই প্রক্রিয়াটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সহায়তা করবে।'

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Economic zones struggle to woo foreign investors

Comments

The Daily Star  | English
NSC shop rent scam in Dhaka stadiums

Shop rent Tk 3 lakh, but govt gets just Tk 22,000

A probe has found massive irregularities in the rental of shops at nine markets of the National Sports Council (NSC), including a case where the government receives as little as Tk 22,000 in monthly rent while as much as Tk 3 lakh is being collected from the tenant. 

16h ago